ডার্ক মোড
Friday, 09 May 2025
ePaper   
Logo
ভারতকে হামলার জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার পাকিস্তানের, বেড়েছে যুদ্ধের শঙ্কা

ভারতকে হামলার জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার পাকিস্তানের, বেড়েছে যুদ্ধের শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক

পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এবার এ হামলার জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান। এতে প্রতিবেশি দেশদুটির মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ হামলার ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ বলে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। এছাড়া ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে ভারতকে হামলার পরিণতি নিয়ে সতর্ক করেছে প্রতিবেশি পাকিস্তান।

দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র। ওই হামলার নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।

অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’ মার্কিন সংবাদসংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে এমন বলার হয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলায় পাকিস্তানে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্রে, আর পাঁচজন গোলার আঘাতে নিহত হন।’

এদিকে পাকিস্তানও এ হামলায় নিহতদের প্রতিশোধ নেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে কোথায় ও কীভাবে হামলা চালানো হবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।

টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার প্রিয় পাকিস্তানি জনগণ, আমাদের সেনাবাহিনী ও জনগণ সবসময় আপনাদের নিরাপত্তার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা অবশ্যই ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াব এবং বিজয়ী হব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সত্যের পক্ষে লড়ছি, তাই আশা করি আল্লাহ সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ জানান, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাঁচটি ভারতীয় জেট বিমান ভূপাতিত করেছে, যেগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরেও ভারতের আকাশসীমায় ছিল।

তবে এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। যদিও পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে ভারতের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তিনটি বিমান পড়ার কথা জানা গেছে।

এদিকে, হামলা ও পাল্টা হামলার এই হুমকির মধ্যে ২০১৯ সালের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পর বর্তমানে আবারও যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশদুটি। ওই বছর কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন।

মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ভারত হামলার চালানোর পর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় সেনাদের ওপর পাল্টা হামলার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। এতে উভয় পক্ষ থেকেই হতাহতের খবর পাওয়া গেছে বলে এপির খবরে বলা হয়েছে।

হামলার পর ইসলামাবাদের সব সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুস্তাফা কামাল। একইসঙ্গে অবিলম্বে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। এছাড়া সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগও ক্রমেই বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ‘দায়িত্বশীল সমাধানের’ পথ খুঁজে বের করতে দেশদুটিকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি উভয় পক্ষকে ভালোভাবেই চিনি। আমি চাই তারা বিষয়টি মীমাংসা করুক, তারা থামুক। আমি যদি কোনোভাবে সহায়তা করতে পারি, তাহলে অবশ্যই করব।’

এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই উত্তেজনা একটি চলমান পরিস্থিতি। আমরা এখনও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশদুটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্পের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমি আশা করি দ্রুতই এই সহিংসতা শেষ হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।’

এছাড়া, দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ছে যুক্তরাজ্যও। সংঘাত পরিহার করে কূটনৈতিক সমাধানের পথে আগানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

বুধবার ( ৭ মে) এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। উভয় দেশের সঙ্গেই যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ ও বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাদের বলে দিতে চাই, যদি এই উত্তেজনা আরও বাড়ে, তাহলে কেউই বিজয়ী হবে না।’

গত ২২শে এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এ হামলা চালানো হলো। শুরু থেকেই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছিল ভারত। যদিও পাকিস্থান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।

ভারতের দাবি, এই হামলার দায় স্বীকার করা ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামক জঙ্গি গোষ্ঠীটি নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত। এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের মদদপুষ্ট বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে ভারত। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পেহেলগামে হামলার পর উভয় দেশ একে অপরের কূটনীতিক ও নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে, সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং আকাশপথ স্থগিত করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক পানি বণ্টন চুক্তিও স্থগিত করেছে ভারত।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন