বেতাগীতে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে মেধায় চাকরি পেল মিমি
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে চাকরিতে অবশেষে মেধার জয় হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মেলায় মেধা তালিকায় প্রথম আফসানা আকতার মিমি নিয়োগ পত্র হাতে পেয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন। এতে পরিবারে ও স্থানীয়দের মাঝে বইছে খুশির জোয়ার।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হালিম মৃধার মেয়ে মোসা. খাদিজা আক্তার তার প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে বিভাজিত ঐ ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে চাকুরের আবেদন করেন। গত বছরের ২২ নভেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে জনবল নিয়োগের প্রকাশিত ফলাফল সংক্রান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আফসানা আকতার মিমিসহ একাধিক প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করে।
এনিয়ে জাতীয় ইংরেজি দৈনিক কান্ট্রিটুডে সহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ইউনিট সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ১১ ও ১২ ডিসেম্বর পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তদন্ত বোর্ডের আহবায়ক ও পরিচালক (পরিকল্পনা) এবং লাইন ডাইরেক্টর (পিএমই) মোহা: সফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি সরেজমিনে গিয়ে এর তদন্ত করেন।
পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনীত অভিযোগ ও সংবাদের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশের পর মেধাতালিকা অনুযায়ী বিধিমোতাবেক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। নিয়োগ প্রাপ্ত প্রাপকের চাকরি বাতিল করে গত ২০ ফ্রেরুয়ারি‘২০২৩ জনবল নিয়োগ বাছাই কমিটির অনুষ্ঠিত সভার সুপারিশক্রমে গত ২৮ ফ্রেরুয়ারি‘২০২৩ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় আফসানা আকতার মিমির অনুকূলে নিয়োগপত্র ইস্যু করে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে শূণ্য পদে নিয়োগ প্রদান করেন।
সোমবার সকালে বেতাগী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় দপ্তরের কর্মকর্তা মো: দেলোয়ার হোসেনের কাছে যোগদান করেন। এ সময় বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো: ইমরানুল হক ও নবযোগদান কারীর স্বামী মো: শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
পদটিতে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে আবেদনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ইউনিট/ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। ঐ বছরের গত ৪ নভেম্বর লিখিত ও ৮নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে চাকরি প্রাপ্ত মেধা তালিকায় প্রথম আফসানা আকতার মিমি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন,‘ দেরীতে হলেও মেধার জয় হওয়ায় খুশি। সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ এবং সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এভাবেই মূল্যায়ন করা দরকার।’
বাবা আব্দুল খালেক হাওলাদার বলেন, বিনাপয়সায় মেধা তালিকায় চাকরি পেয়ে মিমি আমাদের মুখ উজ্জল করেছেন। এভাবে নিয়োগ হলে সমাজ থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি কমে গিয়ে মেধাবীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সূযোগ বাড়বে।
বুড়ামজুমদার ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব শুক্কুর বলেন, ‘আমরাও সন্তুষ্ট ও আশান্বিত। এর মাধ্যমে সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে সে মানুষের কল্যানে কাজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।’
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন,এ নিয়োগের মাধ্যম সত্যতা উদঘাটিত ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেকে মেধাবী হিসাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা বরগুনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হক আযাদ বলেন,‘আমি আগেই বলেছিলাম উৎকন্ঠার কিছু নেই। নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’