
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ, ৪ নেতাকর্মী আটক
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ কালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান সুজুসহ ৪ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলো বন্দর থানার কদম রসুল এলাকার মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা মশিউর রহমান সুজু (৫০) নবীগঞ্জ বাগবাড়ী এলাকার মৃত শুক্কুর মিয়ার ছেলে যুবলীগ নেতা ফারুক (৪৫) বন্দর থানার ২০নং ওয়ার্ডের দড়ি সোনাকান্দা এলাকার আনু মিয়ার ছেলে ২০নং ওয়ার্ডের সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জামান মিয়া (৪২) ও একই এলাকার জসিম উদ্দিন মিয়ার ছেলে সাইদুল মোল্লা (৪৭)।
আটককৃত ৪ নেতাকর্মীকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে বন্দর থানার দায়েরকৃত ৩(৯)২৪ নং মামলা গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার (৩ ফেব্রæয়ারি) রাতে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে , কেন্দ্রের নির্দেশনায় গত ২ দিন ধরে গোপনে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ও ২৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করে আসছিল আটককৃতরা ।
গত সোমবার রাতে নবীগঞ্জসহ সোনাকান্দা ও রুপালী এলাকায় লিফলেট বিতরণ কালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উল্লেখিত গ্যারেজে লিফলেট বিতরণ কালে জামান মিয়া ও সাইদুলকে আটক করা হয়। পরে গতকাল এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও 'বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ'র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আপলোড করা হলে মুহুর্তের মধ্যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ ওই ৪ নেতাকর্মীকে আটক করে।
আটকের বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বন্দর থানার ৩(৯)২৪ নং মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
রূপগঞ্জে খোলা জায়গায় কয়লার স্তুূপ, হুমকির মুখে পরিবেশ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শিমুলিয়া ঘাটে শীতলক্ষ্যা নদীপারে কাঞ্চন সেতুর পাশেই খোলা জায়গায় হাজার হাজার টন কয়লা রেখে ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে এখানকার পরিবেশের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যেকোনো সময় কয়লার স্তূপে আগুন লাগলে এখারে ভয়াবহ ক্ষতির শংকা রয়েছে।
এরপাশেই রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল প্রকল্প ও শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। রাজউক একাধিকবার ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার নোটিশ দিলেও লাভ হয়নি। বর্তমানে ব্যবসা আরও স¤প্রসারিত হয়েছে।
অপরদিকে কয়লার ধুলার কারণে বিদ্যালয়ের ৮০০ থেক ৯০০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত আশা যাওয়া করতে পারে না। ধুলায় শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এরই মধ্যে কয়লার স্তূপের আশ পাশ এলাকায় শত শত গাছ কয়লার তেজষ্ক্রিয়তায় মরে গেছে। অন্যদিকে কয়লার ধূলি-কণা ও কার্বণের কারণে এলাকার পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। কয়লার ধূলি-কণা বাতাসে মিশে পরিবেশকে করে তুলেছে দূষণীয়। সেই ধূলি-কণা মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢুকে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এখানকার লোকজন এক সময় ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা চিকিৎসকের।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, এই কয়লার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের হামলাকারী হত্যা মামলার আসামি রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি আওয়ামীলীগ নেতা সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান তার শ্যালক সহযোগী রুবেলকে দিয়ে দুবাইতে বসে এই অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। আর তাদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন নিরুপায়। অবৈধভাবে শিমুলিয়া ঘাটে কয়লার ব্যবসা করে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের শিমুলিয়া ঘাটে শীতলক্ষ্যা নদীপারের রাজউক জায়গা অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। সেখানে স্তূপ করে কয়েকটি সারিতে কয়লা রাখা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় কালো পাহাড়। চারদিকে কয়লার ধুলা উড়ছিল। এতে করে রাস্তাঘাট দিয়ে মানুষ ও শিমুলিয়া হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কয়লার স্তূপের প্রায় ২০০গজ দূরে তৈরি জেটিতেও রাখা কয়লা-পাথর। জেটির কাছে বড় বড় কার্গো ভেড়ানো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়লা নামানো হচ্ছে। আর শ্রমিক জেটি থেকে কয়লা নামানোর কাজে ব্যস্ত। সেখানেও কয়লার ধুলা উড়ছে। জেটির কাছেই শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের দূর্বাঘাস কালো হয়ে আছে। আর বাতাসে ভ্যাপসা গন্ধ।
শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোতাহার সরকার বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। কয়লা ব্যবসায়ীদের অনেক বোঝানোর পরও তাঁরা কোনো কথা শোনেননি। শুধু বিদ্যালয় নয়, কয়লা ও পাথরের ব্যবসার কারণে চারদিকের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকার জনতা উচ্চবিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা দূষণে ভোগান্তি শিকার হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেঁন, এখন তো শীতের সময়ের জন্য তার জন্য অনেক কিছু আপনারা দেখেন না। জুলাই আগস্ট মাসে আসলে দেখবেন প্রখর রোদে মাঝেমধ্যে কয়লার স্তূপে আগুন ধরে যায়। এসময় এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমাদের এলাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।