
উন্নত জাতি গঠনে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে : বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি
নিজস্ব প্রতিবেদক
পাওয়ার অব মিডিয়া খুবই শক্তিশালী। এই শক্তিশালী মাধ্যম জিরোকে হিরো আবার হিরোকে জিরোও বানাতে পারে। এই মাধ্যমের মূল হচ্ছে সাংবাদিকরা। তারা চাইলে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি ও দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নত দেশগুলোর সাংবাদিকরা তাদের দেশের উন্নয়নে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
একজন সাংবাদিককে হতে হবে সচেতন সমাজ-উদ্যোক্তা, যার চোখে ধরা পড়বে সমাজের প্রতিটি স্তরের দোষ-ত্রুটি তথা সমস্যাবলি। অনুসন্ধানী চোখে পরামর্শ দিয়ে সে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করবে যাতে নীতি-নির্ধারণী মহলে প্রভাব পড়ে। ফলশ্রুতিতে সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করবে। সাথে সাথে উন্নয়নের বিভিন্ন পরামর্শও তারা দিবে। আর এভাবে সূচিত হবে দেশের উন্নয়ন। আর তাই উন্নয়ন সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত দেশে রূপান্তরে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
ঐক্য পার্টির নেতারা অভিযোগ করে বলেন স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে আসছে। স্বাধীনভাবে কলম চালাতে দেয়নি। সাগর-রুনি হত্যাকান্ড সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে প্রকারান্তরে বাধা দিয়ে আসছে। তাছাড়া কিছু সাংবাদিক অনৈতিকতায় বিভোর হয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ক্ষমতাবানদের দালালি করে। বাধ্য হয়ে জিম্মি হওয়া কিংবা দালালি দুটোই উন্নয়নের অন্তরায়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ খ্যাত সংবাদ মাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে না। আর তাই সাংবাদিকদের সমস্যাগুলোর সমাধানপূর্বক তাদেরকে দেশের স্বার্থে নিরাপদ সাংবাদিকতার পরিবেশ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
রবিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ফার্মগেইটস্থ বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির কার্যালয়ে ‘দেশ গঠনে সাংবাদিক ও পুলিশের ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। দলটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সিন্ডিকেটসহ সব সেক্টরের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আগে নজর দেওয়াসহ ১৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
ঐক্য পার্টির পক্ষ থেকে দেশের সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সকল মতপার্থক্য অক্ষুন্ন রেখে সর্বজনীন বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে ঐক্য পার্টির পক্ষ থেকে যে ১৬ টি দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে তা হলো-
১) চিকিৎসা সেবা জাতীয়করণ করতে হবে
২) পুলিশকে রাজনীতিমুক্ত রেখে নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করাসহ পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততম সময়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ উন্নত দেশের মতো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
৩) বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিতপূর্বক আলাদা মন্ত্রণালয় স্থাপন করে বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে।
৪) অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনসহ দেশকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্ত করতে হবে।
৫)বিভাগীয় শহরগুলোকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
৬) দেশের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।
৭) রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ খ্যাত সংবাদ মাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে বাক-স্বাধীনতায় ভূমিকা রাখতে পারে তারজন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতসহ তাদের জীবন মান উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮) দেশকে ঋণমুক্ত করার লক্ষ্যে সকল উপদেষ্টাদের বেতন-ভাতাদি অর্ধেক করত: অপরিকল্পিত প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে।
৯) প্রকৃত অপরাধী ব্যতিত সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সকল অপরাধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে।
১০) দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি কমিশন গঠন করতে হবে।
১১) দ্রব্য-মূল্যের উদ্ধগতি নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি বিল্পব ঘটানোর লক্ষ্যে কৃষিখাত জাতীয়করণ করতে হবে।
১২) দেশ ও জনগনের স্বার্থে বিদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জরুরী কিন্তু যেসব দল/ব্যক্তি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে আইন পাশ করতে হবে।
১৩) রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীর অনাকাঙ্খিত ব্যবহার রোধে দেশের সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে।
১৪) পরীক্ষিত সৎ পেশাজীবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। তা না হলে সংস্কারে তেমন কাজ হবে না। পুলিশ ও বিচার বিভাগ ব্যতিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন সকল অপরাধে তদন্ত করবে, যার আলোকে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।
১৫) দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শিল্পকারখানা স্থাপনে আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ১৬ গণ পরিবহন সেবা জাতীয়করণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এবং পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. ওয়ালিউর রহমান ডাবলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ, ভাইস-চেয়ারম্যান এড. শেখ লালন আহমেদ, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মেজর জেনারেল আমসা আমিন, কর্ণেল মুহাম্মদ জাকারিয়া হোসেন, আলহাজ্ব আবদুর রহিম, লে. কর্ণেল হাসিনুর রহমান, আলহাজ্ব ফজলুল হক, ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, সাংবাদিক জাহিদা পারভেজ ছন্দা, এডভোকেট প্রতিভা বাকচী প্রমুখ।