১৬ বছর পর বেতাগীতে বিএনপির শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে বিএনপির শান্তি সমাবেশ নির্বাচনি জনসভায় পরিনত হয় এবং সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। ‘যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়’ -দীর্ঘ ১৬ বছর এই প্রথমবারেরমত কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতার উপস্থিতিতে বাধাহীন এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দুপুর ১ টা থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানের ছড়া হাতে ডাকঢোল পিটিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থল বেতাগী সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে সরেজমিনে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময় বিএনপির প্রতিটি রাজনৈতিক সমাবেশে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের বাধা ও হামলায় সভা, সমাবেশ করতে পারেনি। সেখানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর বিপূল মানুষের অংশ গ্রহণে সমাবেশ ঘিরে, উচ্ছ্াসিত হয়ে পড়ে এখানকার নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলের চারপাশে নুরল ইসলাম মণির ছবির পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত বেনার-ফেস্টুনও দেখা গেছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ৩টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো: হুমায়ূন কবির মল্লিকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আলহাজ¦ নুরল ইসলাম মণি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বরগুনা জেলা বিএনপির নেতা ফজলুল হক, রেজবুল কবির, সফিকুল ইসলাম মাফুজ, প্রধান বক্তা ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাজাহান কবির। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম সরোয়ার রিয়াদ খান ও পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো:. মিজানুর রহমান খান'র যৌথ সঞ্চালনায় বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফয়জুল মালেক সজিব, বিএনপি ও সহযোগি অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
সমাবেশে বক্তব্য তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে। সুতরাং দ্রæততার সঙ্গে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনারা নির্বাচনব্যবস্থার জরুরি বিষয়গুলো সংস্কার করে দ্রæত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
এসময় তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার নেতাকর্মীরা দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় বিএনপি নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছেন। আমিও অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আনেক হাজার হাজার কোটি টাকা লুট ও বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমাদের লড়াই চলবে।
বেতাগী পৌর ও উপজেলাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনাদের যেকোন প্রয়োজনে পাশে আছি। সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের প্রতিরোধে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার আহবান জানাই। উপজেলা বিএনপির নেতা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বদলে গেছে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমের পরিবেশ। গত এক দশক ধরে দেখা যেত দলটির সভা-সমাবেশ ঘিরে চারপাশে থাকতো পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেই দৃশ্যটি এখন চোখে পড়েনি। এবারে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো বাঁধা আসেনি।
উপজেলা বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম পান্না জানান, ‘এর আগে কবে বাধাহীনভাবে সমাবেশ করেছি, তা মনে পড়ে না। সভা-সমাবেশ হলে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের আটক হতে হয়, এবার তা হয়নি। দীর্ঘদিন পর তাঁদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধাহীন ও ও শাপিূর্ণভাবে শেষ হয়।