
১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ও এনসিসির পক্ষে নেই বিএনপি: সালাহউদ্দিন
পরিবর্তিত নাম ‘সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ (আগের এনসিসি) নিয়ে বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাহী ক্ষমতার কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কাঠামো তারা গ্রহণ করবেন না।
একই সঙ্গে ১০ বছরের বেশি কারও প্রধানমন্ত্রী থাকার ক্ষেত্রেও তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি।
বুধবার দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সংলাপের ষষ্ঠ দিন শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন।
বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস হলে এ সংলাপ বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় শেষ হয়।
পরে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, “এনসিসির (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) মতো আর কোনো বডি নির্বাহী ক্ষমতার কর্মকাণ্ডে বাধাগ্রস্ত করে বা হস্তক্ষেপ করে বা এমন ব্যবস্থা থাকলে আমরা সে প্রস্তাবটা গ্রহণ করব না।
”এনসিসির মতো ব্যবস্থা থাকলে আমরা আগের অবস্থায় থাকব (প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর মানব না) । বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়েও এখনো আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি, পেন্ডিং রয়ে গেল।”
এদিনের আলোচনার প্রথম বিষয় ছিল সংবিধানের মূলনীতি, দ্বিতীয় বিষয় ‘সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ (আগের নাম এনসিসি) এবং তৃতীয় বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ সংক্রান্ত বলে তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন।
সংবিধানের চার মূলনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ক্ষেত্রে (কমিশনের) সংশোধিত প্রস্তাব হল- সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি উল্লেখিত হবে। এটি তারা করবে যারা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে। আমরা বলেছি, রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সাথে পঞ্চম সংশোধনীতে যে আর্টিকেলগুলো ছিল সেগুলো সংযোজন করব। এবং কমিশনের উপরোক্ত বাক্যগুলো আমরা সংযোজন করব। তবে এটা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এটা পেন্ডিং রয়ে গেল।”
এদিন সংলাপে এনসিসির পরিবর্তে ’সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটির‘ প্রস্তাব করে ঐকমত্য কমিশন।
এতে সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার (নিম্নকক্ষ), স্পিকার (উচ্চকক্ষ), বিরোধী দলীয় নেতা, প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি (আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন), প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত এনসিসির সদস্য থেকে তিন বাহিনীর প্রধান ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে এতে রাখা হয়নি।
এমন কমিটি গঠনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, “সংবিধানের নতুন একটা বডি চাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল সাংবিধানিক পুরুষের জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন রয়েছে; তার মধ্যে সংস্কার করা হোক। এবং ওইখানে সার্চ কমিটি গঠন করে দেওয়া হোক।
”নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে সেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে আইনে নিয়োগের ব্যবস্থা থাকবে। সে সকল প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্য আইন থাকবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সে বিধানগুলো এখানে সংযুক্ত করতে হবে। সেই আইনগুলো আমরা যদি মানসম্মত করি, সার্চ কমিটিকে যদি সেভাবে নির্ধারণ করি, আইনগুলো সেভাবে প্রণয়ন করতে পারি। এভাবেই রাষ্ট্রের মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে- এমন প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, মুক্ত গণমাধ্যম যদি নিশ্চিত করতে পারি, দুদকসহ অন্যান্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলো যদি আমরা স্বচ্ছ করতে পারি–এগুলোই গণতন্ত্র রক্ষার কবচ হিসেবে কাজ করবে। এগুলো না করে শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে ক্ষমতা কমিয়ে, সব জায়গায় কাটিল করে একটা সুষ্ঠু রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হয় না।”