ডার্ক মোড
Saturday, 16 November 2024
ePaper   
Logo
সিডিএ'র সক্রিয়া সিন্ডিকেটের কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য

সিডিএ'র সক্রিয়া সিন্ডিকেটের কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য

এম আর আমিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৫ বছরে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেকেই আর্থিক সুবিধা লাভের অভিযোগ রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর সিডিএতেও অসন্তোষ বাড়তে থাকে। চারদিকে যখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে তখন সিডিএতে কয়েকজন প্রকৌশলীর মধ্যে পদ না পাওয়ার বিষয়টি চরম ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটে। কাজী হাসান বিন শামসকে পদ থেকে সরাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক প্রভাব বিস্তার করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

সিডিএর কর্মকর্তাদের অভিযোগ গত ১৫ বছর যাবত ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয়ে একচ্ছত্র সুবিধা ভোগ করেছে তিনি।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে চলছে স্বজনপ্রীতি। কর্তৃপক্ষ পছন্দের কর্মকর্তাদের পিডি নিয়োগ দিয়ে কাজ করানো হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক/সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস ও কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

ঘুষ দিলে অসাধ্য সাধন হয় চউকে, একজনের জমি অন্যজনের নামে প্ল্যান পাশ হয় শুধু এই সিন্ডিকেটের ঘুষ বাণিজ্যের ফলে। আর ঘুষ না দিলে লিগ্যাল কাজেও হয়রানির শিকার হন সেবাপ্রার্থীরা। সম্প্রতি সিডিএ’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা চেয়ারম্যানের হাতে পৌছেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছে। জনভোগান্তি দুর করতে শীঘ্রই শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সুত্র জানায়, একটি দুর্নীতিবাজ চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ সিডিএ কে নিজের সম্পত্তি মনে করে যথেচ্ছা ব্যবহার করেছেন। সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির গ্যাঁড়াকলে ফেলে নিজেরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই চক্রের অপকর্মের কারনে সিডিএ সাধারণ জনগনের কাছে ’আপদ’ নাম হয়ে দাড়িয়েছে। সেবার পরিবর্তে এখানে জুটতো হয়রানী আর দুর্ভোগ।

চেয়ারম্যানের হাতে থাকা তালিকার সুত্রে জানা যায়, সিন্ডিকেটের একটি হলো প্ল্যান অরগানাইজেশান এবং নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ আদায়। প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এর নেতৃত্বে এই তালিকায় আছেন, নগর পরিকল্পনাবিধ ইসা আনসারী, অথরাইজড অফিসার ২ মো. হাসান, অথরাইজড অফিসার ১ মো. তানজীম আহমেদ, সহকারি নগর পরিকল্পনাবিধ মো. আবেদ। অপর আরেকটি সিন্ডিকেটে রয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের পিডি মাইনুদ্দীন, আবু হেনা মঞ্জু, ল্যান্ড জাবেদ, ইন্সপেক্টর তোফায়েল, শাহরিয়ার, সিবিএ’র বক্কর, মাইনুদ্দিনের পিয়ন এবং সিবিএ নেতা নাসির খান।

সুত্র জানায়, এই চক্রটি একেকটা প্ল্যান পাশ করাতে ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিতেন। মাসে বোর্ড মিটিং এ ৭০-৮০ টা প্ল্যান পাশ হতো। প্রতি মাসে প্রায় প্রতি জনের পকেটে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করতেন। অথরাইজড অফিসার হাসান সিন্ডিকেট এই কাজ থেকে মাসে অর্ধ কোটি টাকার উপরে ইনকাম করতেন। আর এদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে একাউন্টেন্ট নাজের।

হাসান, শাহদাত, কাজী হাসান বিন শামস, সিবিএ নেতা নাসির খান, টিপু, জাভেদ ও অন্যান্যরা সিডিএ’র ফি ক্যাশ টাকা নিয়ে, আগের স্লীপ এড করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। ১৯৯১- ২০২৪ এর হিসাব মিলালে অর্ধেক রাজস্বের হিসেব মিলবেনা বলে সুত্রটি দাবি করেন। ল্যান্ড আবু হেনা মঞ্জুর তত্ত্ব¡াবধানে, হাসান বিন শামস জমির ফাইল ট্রান্সফারের মাধ্যমে গ্রাহককে হয়রানি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন। এর ফলে প্রচুর পরিমান রাজস্ব হারায় সিডিএ। আর হয়রানির শিকার হয়ে জনগণ সিডিএ’র প্রতি ঘৃনা ছুড়তে থাকে।

সুত্র জানায়, সিডিএ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সিন্ডিকেট এটিকে দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিনত করেছে। সরকার পতনের পর নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর সকল অপকর্ম রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। দুর্নীতি রোধ করতে অসৎ কর্মকর্তাদের একটি তালিকাও করা হয়েছে। খুব সাবধানে তাদের কর্মকান্ড নজরদারি করা হচ্ছে। কোন অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি অথরাইজড অফিসার ২ মো. হাসানকে বস্কিার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা নং- ৪০/২০১২, ৪১/২০১২ ও ৪৩/২০১২ বিচারাধীন রয়েছে। আরো যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদেরকে পর্যায়ক্রমে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন