ডার্ক মোড
Thursday, 29 May 2025
ePaper   
Logo
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দুর্নীতিবাজ মুন্সিগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার রমজান এখন ঢাকার রেজিস্টার হতে চান

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দুর্নীতিবাজ মুন্সিগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার রমজান এখন ঢাকার রেজিস্টার হতে চান

বিশেষ প্রতিবেদক

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং আখাউড়া উপজেলায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে আইন মন্ত্রীর মাধ্যমে বিগত ১৫ বছর দেশের শীর্ষস্থানীয় অফিস গুলোতে পোস্টিং নিয়ে নানা অনিয়ম দূর্নীতি ও বদলী বানিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ও প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুন্সিগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ রমজান খানের বিরুদ্ধে।

বর্তমানে আইন মন্ত্রনালয়ের উচ্চ পদস্থ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়ে তিনি নতুন করে বদলী বানিজ্য শুরু করেছেন বলে কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এতে দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ আওয়ামী ক্যাডার ও সাব-রেজিস্ট্রার বদলী বানিজ্যের :গডফাদার 'রমজান খানের দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পাদ অর্জন ও বদলী বানিজ্য করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয় কিন্তু অজ্ঞত কারণে এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধিনস্থ কর্মরত কর্মচারীদের পক্ষে দায়ের করা অভিযোগে আরও বলা হয়েছে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ রমজান খান দীর্ঘদিন সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরী করে দেশের লোভনীয় স্টেশন গুলোতে দু’হাতে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ২০০৪ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরীতে যোগদান করেন এই রমজান।

তার বাড়ী সাবেক আইন মন্ত্রী আনিছুল হকের নির্বাচনী এলাকা আখাউড়া উপজেলায় হবার সুবাদে তিনি আইন মন্ত্রীর মাধ্যমে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিস গুলোতে বদলী হয়ে কোটিপতি বনে যান এবং বিভিন্ন সাব রেজিস্টারদের বদলি ও ও কর্মচারীদের চাকরির তদবির বাণিজ্য করেন । ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। সেই সুবাদে প্রথম জেল পুলিশ হিসেবে বিভিন্ন জেলে চাকুরী করেছেন।

সর্বশেষে যশোর জেলে বন্দীদের অত্যাচার করে টাকা আদায় করার অভিযোগে তার চাকুরী চলে গেলে সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। তারপরই রমজান খানের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। তিনি নরসিংদী সদর, কালামপুর, ফতুল্লা, গুলশান, নেত্রকোনা সদর ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থেকে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি ও বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার বদলী বানিজ্য করে দু’হাতে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর ঐ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তার শ্যালকের মাধ্যমে লন্ডন, মালয়শিয়া ও দুবাইতে। তার দুবাই, লন্ডন ও মালয়শিয়ায় রয়েছে প্রায় অর্ধ ডজন বাড়ী।

আওয়ামী সরকারের পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক দলের ভোল্ট পাল্টে রাতারাতি হয়ে যান বিএনপি নেতা এবং নতুন করে শুরু করেন তদবীর বানিজ্য। ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির কমিটি গঠনের দায়িত্ব নেন । আওয়ামী দোসরদের প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েকশত আওয়ামী চিহ্নিত কর্মীকে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে এবং তাদের রক্ষা করেন।

নিজে বিএনপির খাস লোক পরিচয় দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার পদ থেকে জেলা রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি নিয়ে অবৈধভাবে একই জেলার জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন তদবীরের মাধ্যমে যা বিধি বহির্ভূত। ৫ আগষ্টের পর মামলা বানিজ্যও করেন এই সুচতুর জেলা রেজিস্ট্রার রমজান খান।

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত ১৭ বছরে যত বদলী বানিজ্য সংঘটিত হয়েছে তার সিংহভাগই বদলীতে নেপথ্য ভুমিকা রেখেছেন রমজান খান। আইন মন্ত্রনালয়ের সাবেক দুর্নীতিবাজ যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহার ডানহাত হিসেবে বদলী বানিজ্য পাকাপোক্ত করতেই তিনি গুলশান-১ এর গ্লোরিয়ার জিন্স হোটেলটি বেছে নেন । সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই বসে রমজান খান সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সহকারীদের বদলী বানিজ্যের হাট।

চট্টগ্রাম সদর, গুলশান, শ্যামপুর, কেরানীগঞ্জ, গজারিয়া, রূপগঞ্জ, কাপাশিয়া, শ্রীপুর, গাজীপুর সদর, রাঙ্গুনিয়া, কক্সবাজার সদর, পটিয়া, নোয়াখালী সদর, টাঙ্গাইল সদর, নবাবগঞ্জ, মধুপুর, ঘাটাইল, ত্রিশাল, কান্দিরপাড়, ফুলপুর, খিলগাঁও সহ দেড় শতাধিক সাব-রেজিস্ট্রার বদলী করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গত ৬ মাসে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্থানীয় দুই জন কর্মকর্তাসহ কতিপয় সাব-রেজিস্ট্রারকে সাথে নিয়ে রমজান খান সিন্ডিকেট গঠন করে এ বদলী বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লাকে চট্টগ্রাম সদর / রূপগঞ্জে বদলীর কথা বলে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে রমজান খানের বিরুদ্ধে । পরে তাকে বদলীর আদেশ করান শীতাকুন্ডে। আরও অতিরিক্ত বেশী টাকা পেয়ে রূপগঞ্জ ও চট্টগ্রাম সদরে অন্যদের বদলী করান। পরবর্তীতে আনডিউ বদলীর দোহাই দিয়ে ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে শীতাকুন্ডের বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিবের বদলীর আদেশ বাতিল করেন। সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লার টাকা গুলো মেরে দেন রমজান খান।

বদলী বানিজ্যের গডফাদার রমজান খান এখন মে মাসের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে ঢাকা জেলার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে বদলী হয়ে আসবেন ও ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। একজন আওয়ামী ক্যাডার ও দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ জেলা রেজিস্ট্রার বিদেশে অর্থ পাচারকারী যদি ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে বদলী হয়ে আসেন তাহলে ঢাকা জেলার ২১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসই দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। তাদের মতে এমনিতেই রমজান খানের ৩০ জন ব্যক্তিগত দালাল রয়েছে সারাদেশে। যারা প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে দলিল ধরে জোর করে সাব-রেজিস্ট্রারদের দলিল করতে বাধ্য করছেন। তার মধ্যে যদি রমজান খান ঢাকায় যোগদান করেন তাহলে ঘুষ দুর্নীতি, দলিল বানিজ্য ও অনিয়ম বেড়ে যাবে কয়েকগুণ বেশী। তাই ঢাকা জেলা সহ সকল রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স জুড়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এখন রমজান আতংক বিরাজ করছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, রমজান খানের রয়েছে গুলশানে নামে বেনামে ৩০টি ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং করা। গুলশান নিকেতনে তিনি বসবাস করছেন । আখাউড়াতে রয়েছে তার কয়েকশত একর জমি। ব্যাংকে রয়েছে মোটা অংকের টাকা। দুর্নীতিবাজ ও বদলী বানিজ্যের গডফাদার রমজান খানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

তাছাড়া, আইন উপদেষ্টা ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি বিরাট অংকের টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একজন বিএনপি নেতার নাম ব্যবহার করে করে এবং তাকে কিছু আর্থিক সুবিধা দিয়ে অপকর্ম থেকে রক্ষা পেতে চাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে হাই কমান্ডকে জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে একটি মানবাধিকার সংস্থা তার এই অনিয়ম -দুর্নীতি তদন্তের জন্য আইন উপদেষ্টা, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।

আরেকটি বিশ্বসুত্র জানাগেছে, তার বিরুদ্ধে আইন উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন অভিযোগ গেলে তাকে আইন মন্ত্রণালয় ঢুকতে নিষেধ করেছেন।

আরো জানাগেছে, তার ঢাকা জেলা রেজিস্টার হওয়ার মিশন ব্যর্থ হলে তিনি আমেরিকা অথবা অন্য কোন দেশে চলে যেতে পারেন। এ ব্যাপারে তার প্রস্তুতি রয়েছে।

এই অভিযোগের বিষয় তার বক্তব্য জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেয়া হলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি বরং সংবাদ বন্ধ করার জন্য তদবির করান।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দুর্নীতিবাজ মুন্সিগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার রমজান এখন ঢাকার রেজিস্টার হতে চান

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন