
সাতক্ষীরায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৬০৬টি পশু: পাচার প্রতিরোধে সীমান্তে কঠোর নজরদারি
এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
মুসলিম উম্মাহ'র অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাতক্ষীরার ২৭২ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরমধ্যে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এবং ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন-এর পাশাপাশি রয়েছে রিভারাইন বর্ডার গার্ড। প্রতিবেশী দেশ থেকে যাতে কোনভাবে চোরাই পথে গরু প্রবেশ করতে না পারে এবং বাংলাদেশ থেকে যাতে কোনভাবে চোরাই পথে চামড়া পাচার হতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সীমান্ত সূত্রগুলো। একইসাথে মাদক পাচার ও পুশইন প্রতিরোধে সীমান্তে সার্বক্ষণিক সীমান্তে দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি।
এদিকে ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় জমে উঠেছে সাতক্ষীরার পশুর হাট ও খামারগুলো। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি গরুর গোসল, খাবার তৈরি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। তবে এবার চাহিদার চেয়ে পশুর সংখ্যা বেশি থাকায় প্রত্যাশিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। সেই সঙ্গে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশের শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। যদিও সীমান্ত পাহারায় রয়েছেন বিজিবির পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহায় সাতক্ষীরায় কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ৩১৮টি। বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬০৬টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে ৪৯ হাজার ১৯৯টি গরু, ১ হাজার ১৮২টি মহিষ, ৪৪ হাজার ৫৪টি ছাগল, ৬ হাজার ১৫৬টি ভেড়া এবং অন্যান্য ১০টি পশু।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের খামারি আব্দুল আজিজ জানান, মাত্র ছয় মাস আগে খামার শুরু করেছি। এখন আমার খামারে ১০টি গরু রয়েছে। নিজ বাড়িতে লাগানো ঘাস খাইয়ে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করছি। যদি ভারত থেকে গরু না আসে, তাহলে আমরা প্রান্তিক খামারিরাও ভালো লাভ করতে পারব।
একই উপজেলার খামারি ইনজামুল হক বলেন, আমার খামারে প্রতিদিন সকাল বেলা গরুর গোসল করিয়ে পরিচর্যা করি। এরপর খাবার দেওয়া হয় পর্যায়ক্রমে। সবসময়ই স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখি।
তিন বছর ধরে গরু পালন করছেন খামারি হাফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবার খাবারের দাম অনেক বেশি, কিন্তু বাজারে গরুর দাম কম। লাখ টাকার ওপরে গরু বিক্রি হচ্ছে না। লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। তবে বড় গরুগুলো বিক্রি হলে হয়তো কিছু লাভ হতে পারে।
এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে পশুর দাম কিছুটা সহনীয় থাকবে বলে ধারণা খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডাঃ বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, চাহিদার তুলনায় এবার প্রায় ১৫ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। ভারতীয় গরু যাতে না আসে, সেজন্য সরকার কড়া অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, জেলার ১২ হাজার ৮৯৪টি খামারে পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার পশুর সংখ্যা বেড়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশ। তার মতে, চোরাই পথে সীমিতসংখ্যক গরু এলেও তাতে প্রান্তিক খামারিদের উপর তেমন প্রভাব পড়বে না।
অন্যদিকে, সাতক্ষীরার বাজারে এখন পশু খাদ্য ও পরিচর্যা খরচ বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তবুও আশাবাদী তারা যদি বাজারে ভারতীয় গরু না আসে, তাহলে লোকসানের আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমবে।
এদিকে সাতক্ষীরায় ঈদে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬।
এ বিষয়ে র্যাব-৬, সিপিসি-১, সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোঃ এহতেশামুল হক খান বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার নাশকতা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সাতক্ষীরার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, যেন তারা নিজেরাও সচেতন থাকেন এবং যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে আমাদেরকে দ্রুত অবহিত করেন। র্যাব সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। ঈদকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতা, মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও টহল টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।