ডার্ক মোড
Wednesday, 04 June 2025
ePaper   
Logo
সংস্কারের বাজারে সালেহউদ্দিন আসছেন পুরনো ছকের ‘সরল’ বাজেট নিয়ে

সংস্কারের বাজারে সালেহউদ্দিন আসছেন পুরনো ছকের ‘সরল’ বাজেট নিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার

রাজনৈতিক পালাবদলে জনমানসে যখন সর্বত্র পরিবর্তনের প্রত্যাশা, সংস্কারের ছোঁয়ায় যখন অর্থনীতিকে নতুন আঙ্গিক দেওয়ার কথা, সেই সময় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আসছেন ‘সরল’ বাজেট নিয়ে।

 

তার হাত দিয়েই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কিছুটা কমছে বাজেটের আকার। এর বাইরে আর কোনো চমক তিনি দিতে যাচ্ছেন– তেমনটা শোনা যায়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে তিনি অভাবনীয় কিছু করতে যাচ্ছেন–তেমন ইঙ্গিতও মেলেনি।

রাজনৈতিক সরকারের মত নির্বাচনি ইশতেহার পূরণের জনতুষ্টির বাজেট দেওয়ার চাপ সালেহউদ্দিনের ছিল না। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর কোনো দায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।

সাবেক এই গভর্নর তার বাজেটের হিসাব মিলিয়েছেন বহু বছরের চর্চার সেই পুরনো সমীকরণে। চাপে থাকা অর্থনীতির বাস্তবতা মেনেই তাতে থাকছে সংযত ভাব।

সোমবার বিকাল ৩টায় জাতির উদ্দেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সংসদ না থাকায় তার বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হবে টেলিভিশনের মাধ্যমে।

এ পর্যন্ত যে আভাস পাওয়া গেছে, তাতে ব্যয়ের লাগাম টেনে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ১৪ বছরের সর্বনিম্ন। আর সেই অংক সীমাবদ্ধ থাকছে জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ শতাংশের মধ্যে।

স্বাধীনতার পর প্রথমবার বাজেটের আকার বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে (জিডিপির ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ) ধরা হচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ কমছে আকার; টাকার অংকে যা সাত হাজার কোটির মত।

তবে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ দশমিক ১৮ শতাশ বেশি থাকছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর রেখে যাওয়া ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার চলতি বাজেট (চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের) অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করে ৭ লাখ ৪০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছিল।

ব্যয় কিছুটা কমানোর কারণে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রাও আগেরবারের চেয়ে কমিয়ে ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা; জিডিপির ৪ দশমিক৬ শতাংশ।

২০১১-১২ সালের পর আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি (৩ দশমিক ৬২ শতাংশ) সবচেয়ে কম। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর থেকে ঘাটতি সবসময়ই ৪ দশমিক ৯ শতাংশের বেশি ছিল।

বাস্তবতার সঙ্গে মিল রাখতেই ঘাটতি কমিয়ে বাজেটের আকার ছোটো রাখার কথা বলেছেন প্রায় দেড় যুগ আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব সামলে আসা সালেহউদ্দিন।

তবে প্রথমবারের মত বাজেট দিতে গিয়ে তিনি জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশে ওঠানো ও মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তা যথেষ্টই উচ্চাভিলাষী।

পুরনো কাঠামোই থাকছে?

অভ্যুত্থানের পর ভিন্ন বাস্তবতায় রাজনৈতিক চাপ না থাকায় নতুন কিছু করার সুযোগটা নেননি অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ। কেননা এ বাজেটের কতটা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেই দিনলিপিও তার জানা নেই।

উল্টো সংস্কারের তোড়জোড়ের মধ্যে নির্বাচনি পথনকশার ডামাডোল সময়টাকে অস্থির করে তুলেছে; অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগের জন্য অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি করেছে। আবার একটি মাত্র বাজেট দিয়েই সবকিছু খোলনলচে পাল্টে দেবেন এমন যাদুমন্ত্রও তার হাতে নেই।

এ কারণে ‘আটসাঁট’ বাজেট দেওয়ার কথা বারবার বলা হলেও আসছে বাজেটে আগের পুরনো কাঠামোরই ‘পুনরাবৃত্তি’ দেখতে পাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।সাবেক আমলা ও অর্থনীতির শিক্ষক সালেহউদ্দিন আহমেদও মানছেন সে কথা

তিনি বলেন, “বাজেট এমন কিছু না যে একেবারে মৌলিক পরিবর্তন এনে এক বছরে বাস্তবায়ন করে ফেলব। ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে হবে। এবারের বাজেট বাস্তবতার ভিত্তিতে যতটা সম্ভব যুক্তিযুক্ত ও সরল রাখার চেষ্টা করেছি।”

এমন যুক্তির মাঝেও তার কাছে অনেকের ভিন্ন অভিপ্রায় ছিল। অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী চেয়েছিলেন অতীতের জঞ্জাল দূর করে একটি ‘স্মার্ট বাজেট’।

অরাজনৈতিক সময়ে, ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটের কারণে এ বাজেট নিয়ে প্রত্যাশার কথা বলেছেন আরেক অর্থনীতিবিদ সাউথ এশিয়ান নেটয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানও।

বৃহস্পতিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা আমরা বুঝি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সময়টা অগাস্টের পরে পেয়েছে, প্রায় নয় মাসের মত সময় তারা পেয়েছে। কিন্তু তারপরও যে বাজেটটা প্রস্তাবিত হতে যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে, সেখানে পুরনো যে বাজেট কাঠামো তার বাইরে গিয়ে আমরা যতটুকু খবর পাচ্ছি, খুব বেশি নতুন কিছু করার বিষয় নেই।“

পুরনো ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাজেট দেওয়া হচ্ছে বলে সমালোচনাও করেন তিনি। বলেন, “আমরা দেখছি সেই বাজেটের ওপর বেইজ করে, সেই যে তথ্য-উপাত্তগুলো, যেগুলো নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম শ্বেতপত্র কমিটিতে, বাজেট হচ্ছে।

”আমরা জিডিপির ফিগার নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছি, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টসের যে তথ্যগুলো, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ডেটা নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। বলেছি, অনেক ক্ষেত্রে ম্যানিপুলেশন আছে; তথ্যগত ভুল আছে। কোনো কোনো জায়গায় বানিয়ে বলা হত।

“সেগুলো কিন্তু কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি এবং সেগুলোর ওপর বেইজ করে কিন্তু নতুন আবার এই বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।”

গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবারের বাজেটেও ‘নতুন মোড়কে পুরাতন গল্পই’ লেখা হবে বলে মনে করছেন।

শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দু:খজনকভাবে এবারের বাজেটও গতানুগতিক হতে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মত নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে নতুন কোনো চমক থাকছে না।

প্রত্যাশার চাপ কতটা?

সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

সেদিনও ছিল সোমবার। বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজের বাজেট বক্তৃতা।

এবারও টিভি ও বেতারে বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা। এরপর ৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন। সেটাই হবে অনুমোদন।তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়গুলো ২ জুন থেকেই কার্যকর হবে। অন্য বরাদ্দগুলো ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন