ডার্ক মোড
Saturday, 26 April 2025
ePaper   
Logo
সন্দ্বীপে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা

সন্দ্বীপে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা

সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সন্দ্বীপ দিন দিন ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠছে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট।চারদিকে বিশাল জলরাশি, সন্দ্বীপের প্রবেশ পথে বিশাল কেওড়াবন, পশ্চিমে ব্লক বেড়িবাঁধের নান্দনিকতা,পাশাপাশি জেগে উঠা নতুন চরে সারি সারি নারিকেল গাছ,চড়ের মাঝে জেগে উঠা নোনা উদ্ভিদ,মাঝে মাঝে ভেড়া ও মহিষের পাল, চরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালে জেলেদের মাছের নৌকা,গোবরের বিষ্ঠা হতে গই নামে একটি বিশেষ ধরনের জ্বালানী প্রস্তুতের দৃশ্য, কিছু কিছু জায়গায় রশি বেঁধে চেউয়া শুটকি শুকানো,নতুন চরে পলি জমা,নৌকা ও ট্রলার তৈরির দৃশ্য, সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পুর্ব মুহুর্তে বিভিন্ন প্রজাতীর গাছগুলো সংগ্রাম করে টিকে থাকার দৃষ্টান্ত দেখে প্রকৃতি প্রেমী মানুষরা নিজের অজান্তে বলে উঠেন বাহ এমন ব্যাতিক্রম দ্বীপ কোথাও খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর। আর সেই নদীর কূলে তাবু খাটিয়ে পুর্নিমার চাঁদ দেখা, পড়ন্ত বিকালে সুর্যাস্তের দৃ্শ্য, সুনশান নীরবতা কক্সবাজার ও কুয়াকাটার সৌন্দর্যকেও হার মানায়। এ সমস্ত বিষয় গুলো ফেইসবুকের সুবাদে ব্যাপক প্রচারনার ফলে সন্দ্বীপে প্রায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। তাবু খাটিয়ে উপভোগ করেন সে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।মুগ্ধ হয়ে দেখে চর ও সাগরের সঙ্গমস্থলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এবং উপভোগ করেন তার পাশে ক্রীড়ামোদী যুবক ও কিশোরদের প্রতিনিয়ত ফুটবল টিমের আয়োজন। অপরদিকে জোয়ারের সময়ে এখন ভ্রমন পিয়াসীরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বা পতেঙ্গা সি-বিচের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য অনুভব করতে পারেননা। বরং সন্দ্বীপে তার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দয্য যোগ করে নতুন ব্যঞ্জনা। তাই এটিকে উপজেলা প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিক মনোভাব পারে পুর্নাঙ্গ একটি বিনোদন স্পট বা পর্যটন এলাকায় রুপান্তর করতে, এমনটি জানালেন ঘুরতে আসা বিভিন্ন দর্শনার্থী।

সরেজমিনে গেলে প্রতিনিয়ত দেখা মেলে হরিশপুর, রহমতপুর সীমানায় সন্দ্বীপের বাইরের অনেক ভ্রমন পিপাসুদের।এতোদিনের দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থাকে এখন আরো সহজ করে দিলো গত ২৪ মার্চ সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম রুটে চালু হওয়া ফেরি কপোতাক্ষ। এরপর পর্যটকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যেন। এখন বাংলাদেশ প্রত্যান্ত অঞ্চল সহ বহিঃবিশ্বের অনেককেও দেখা যাচ্ছে। এমনকি নারী পর্যটকরাও সরাসরি মোটর সাইকেল চালিয়ে সন্দ্বীপে এসে খুবই উচ্ছসিত।
কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের স্টুডেন্ট তানভীর আহম্মেদ রাফি প্রবাসী সিঙ্গাপুরের রেমিটেন্সযোদ্ধা ওয়াহিদ মুরাদ সহ ৭/৮ জনের একটি পর্যটক দলের দেখা মেলে। তাদের সাথে কথা বললে তারা জানালেন তাদের চমৎকার অনুভুতির কথা রাখলেন কিছু প্রস্তাবনাও ।

তানভীর আহম্মেদ বলেন অপরিসীম সৌন্দর্যের লীলা ভুমি প্রকৃতির রানী সন্দ্বীপ। সারি সারি নারকেল গাছ,নতুন চরের ফাঁকে ফাঁকে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খাল , গবাদি পশুর পাল, রাত্রে এ সুনশান নিরবতায় বসে চাঁদনী রাত উপভোগ করছি প্রান ভরে। শ্বাস নিচ্ছি নির্মল অক্সিজেন গ্রহনের মাধ্যমে। কোন ময়লা আবর্জনা, ধুলি বালি নেই বলে কোন কাকের উপস্থিতিও নেই এখানে। সেটাই প্রমান করে এখানকার পরিবেশ কত নির্মল। এছাড়াও এখানকার মানুষ গুলো খুবই আন্তরিক।তবে এখানে পর্যটকদের সুবিধার্থে কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নিতে হবে সেগুলো হলো দীর্ঘক্ষন অবস্থান করা দর্শনারর্থীদের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন স্পটে কয়েকটি গনশৌচাগার নির্মান, সন্ধ্যার পরও বা রাত্রে যারা অবস্থান করবে তাদের সুবিধার্থে কিছু স্ট্রিট লাইট স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের টহল ব্যবস্থা বা ২/৪ জন আনসার নিয়োগ, বসার জন্য কিছু স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং কিছু হোটেল রেষ্টুরেন্ট স্থাপন। তাহলে পর্যটকরা স্বল্প সময়ের জন্য এসে খাবার সংগ্রহের কাজে যে সময় ব্যয় করতে হয় সেটা থেকে মুক্ত থাকলে নির্ভেজাল আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।

ওয়াহিদ মুরাদ বললেন সম্পুর্ন ব্যতিক্রম কথা তিনি বললেন শহরের কোলাহল মুক্ত পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠে মানুষ এখন সন্দ্বীপের মতো জায়গার প্রতি আকৃ্ষ্ট হচ্ছে। এখানে পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে কিছু উন্নয়ন জরুরী তবে সে উন্নয়ন করতে গিয়ে বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেমের কোন ক্ষতি করা যাবেনা, পাখীদের অভয়াশ্রম তৈরি করতে হবে এটিকে, তাদের কোন ভাবে বিরক্ত করা যাবেনা তাই কিছু ইকো রিসোর্ট তৈরি করা যেতে পারে। কক্সবাজার বা কুয়াকাটার মতো বানিজ্যিক ভাবে বেশী কিছু করতে গেলে সেখানে টেন্ডারবাজি বা অনৈতিকতার বিষয় এসে যাবে। উচ্চস্বরে মাইকিং বা বা ডিজেগানের তালে আনন্দ করতে গেলে প্রকৃতির ব্যাঘাত ঘটবে। সে সমস্ত ঝঞ্জাট নেই বলে আমাদের সন্দ্বীপ খুব ভালো লেগেছে। সকল বন্ধুদের বলবো প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখতে হলে সন্দ্বীপ এসে ঘুরে যাও।

অন্যদিকে সন্দ্বীপের দুই যুবক মেহেদী ও সবুজ আনোয়ার বললেন চরকে আরো বেশী সম্ভাবনাময় ও অর্থনৈতিক জোনে পরিনত করে সেগুলোকে চাষাবাদ যোগ্য করতে পারলে হাজার হাজার একর ভুমি হবে আমাদের উপার্জনের বড় উৎস। তার জন্য জেগে উঠা চরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত অসংখ্য ছোট ছোট খালের মধ্যে ২/১ টি মুল খাল চিহৃিত করে সেগুলো ড্রেইজিং করে গভীর করে সে মাটি দিয়ে বাকি খালগুলো বন্ধ করে দিতে হবে তার জন্য একটি ড্রেইজিং মেশিন দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করতে হবে।সেগুলো তখন রুপান্তরিত হয়ে, হয়ে যাবে কৃত্রিম লেক। এরপর কয়েকটি নোনা বেড়িবাঁধ বা রিং বেড়িবাঁধ দিয়ে সেগুলোতে সিজনাল সব্জী চাষ করে সন্দ্বীপের খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানী করা যাবে এবং বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে ডেকে এনে এখানে মৎস্য ও গবাদি পশুর চারন ভুমি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দুগ্ধজাত পন্য তৈরি ও রপ্তানী করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন ও বেকারত্ব দুরীকরনে ভুমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

অন্যদিকে সন্দ্বীপের পরিবেশ নিয়ে ভাবেন এমন কয়েকজনের অভিমত জানতে চাইলে তারা বলেন সন্দ্বীপের পূর্ব ও দক্ষিন সাইডে এবং হরিশপুর ও কালাপানিয়ার পশ্চিমে জেগে উঠা কেওড়া বনকে ইকো পার্কে পরিনত করতে সেখানে কয়েকটি হরিন ছানা ছেড়ে দেওয়া যায়। ৪/৫ বছর পর সেগুলো থেকে কয়েকশ হরিন উৎপাদন হবে। অন্যদিকে সন্দ্বীপের চারপাশে চলমান ব্লক বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন হলে সেগুলো মেরিন ড্রাইভে পরিনত করতে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎসাহিত করে প্রকল্প হাতে নিলে সন্দ্বীপ হবে সেরা আকর্ষনীয় স্পট। তবে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে এখন সন্দ্বীপের মূল দুইটি সড়ক গুপ্তছড়া ও দেলোয়ার খাঁ সড়ক ডাবল লেইন করা খুবই জরুরী। এছাড়াও সড়কে গতিরোধক বা গতিসীমা নির্দেশিকা সাইনবোড স্থাপন, ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে ও ট্যুরিষ্টদের বিব্রত না করে প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া নিতে এবং পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরণ পরিহার করতে রিক্সা, টেক্সি ও অটো চালকদের সচেতনতা মূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করাও জরুরী।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন