
শ্রীপুরে স্ত্রীর আত্মহত্যায় স্বামী গ্রেপ্তার, জনমনে প্রশ্ন
এস এম জহিরুল ইসলাম, শ্রীপুর,গাজীপুর
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় তাঁর স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত রবিবার বিকাল ৫টায় শ্রীপুর উপজেলার কাজীপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লিমা সরকার (২৫) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার সিংদীঘির এলাকার বিএনপি নেতা এবিএম হাসানের মেয়ে এবং খিলপাড়া গ্রামের রাজিব প্রধানের স্ত্রী। রাজিব একজন পেশাদার সংবাদকর্মী।
জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাজিব ও লিমার মধ্যে। ২০১৪ সালে তারা পরিবারকে না জানিয়েই বিয়ে করেন। দীর্ঘদিন গোপনে সংসার করার পর অবশেষে ২০২৫ সালে পরিবারিক স্বীকৃতি পান। তবে শুরু থেকেই শ্বশুর এবিএম হাসান সম্পর্কটিকে মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। তিনি জামাতা রাজিবের বিরুদ্ধে শাশুড়ির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন। এসব নিয়ে পরিবারে শুরু হয় কলহ।
রাজিবের দাবি, “আমার স্ত্রী লিমা মানসিক চাপে ও হতাশায় ভুগছিলেন। শ্বশুর আমাদের সম্পর্ক মানেননি, বরং আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছেন। এমনকি শাশুড়ির সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে শাশুড়িকে একঘরে করে দিয়েছেন। এসব কারণে লিমা গভীর ডিপ্রেশনে ছিল। কিন্তু আমি কখনো আমার স্ত্রীকে মারধর করিনি, আমাদের সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর।”
লিমার মৃত্যুর পর তাঁর পিতা এবিএম হাসান প্রথমে হত্যা মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন, কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সেটি সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল, যার জেরে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা রুজু করা হয়েছে (মামলা নম্বর-৬২, তারিখ: ৩০ জুন ২০২৫)। রাজিব প্রধানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়াই শুধুমাত্র পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পেশাদার সংবাদকর্মীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোয় জনমনে প্রশ্ন ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আত্মহত্যার পেছনের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।