ডার্ক মোড
Tuesday, 01 July 2025
ePaper   
Logo
হাতিয়ার মেঘনায় ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ স্পিডবোট,নিরভ প্রাশাসন

হাতিয়ার মেঘনায় ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ স্পিডবোট,নিরভ প্রাশাসন

সাব্বির ইবনে ছিদ্দিক, হাতিয়া (নোয়াখালী)

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীজুড়ে নিয়মিত চলাচল করছে অন্তত ৭০টির  বেশি পিটনেসবিহীন স্পিডবোট। বৈধ কাগজপত্র, অনুমোদন কিংবা যাত্রী নিরাপত্তার তোয়াক্কা ছাড়াই এসব বোট প্রতিদিনই পরিবহন করছে হাজারো যাত্রীকে। প্রশাসন জানে, তবুও নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ—অভিযোগ স্থানীয়দের।

সম্প্রতি মেঘনা নদীতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন যাত্রী মোক্তাদির রাহিম জনি। তার ভাষায়, “বোনকে নিয়ে যে স্পিডবোটে উঠেছিলাম, তাতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল। মাঝ নদীতে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। চালক দ্রুত তীরে ভিড়িয়েছিলেন, তবে অনেকের ব্যাগ ও মালামাল হারায়।” এই দুর্ঘটনার জন্য অভিযুক্ত বোটের মালিক পিটু, যিনি স্থানীয়ভাবে একজন প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির সাবেক নেতা হাসান ইমামের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না বলেই দাবি এলাকাবাসীর।

নলচিরা ও চেয়ারম্যান ঘাট—এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে ‘লাইনে তোলা’ বোটগুলোর নিয়ন্ত্রণ মূলত মালিকদের তৈরি সিন্ডিকেটের হাতে। প্রতিটি ট্রিপ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। নলচিরা ঘাটে জাহেদ, আশরাফ, আয়াত, ইউসুফ, আকবর; চেয়ারম্যান ঘাটে শরিফ, রহমত ও ফরিদ—এই লাইনম্যানরা অর্থের বিনিময়ে অনুমোদনহীন স্পিডবোটগুলোকে যাত্রী তোলার সুযোগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই ঘাটে মিলে ৭০টির বেশি স্পিডবোট চালু থাকলেও ফিটনেস সনদ আছে মাত্র ১৮-২০টির। বাকি বোটগুলোতে ছোট ইঞ্জিন লাগানো হলেও বডি আকারে বড়, ফলে মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বন্ধ হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক। এপ্রিল মাসেও একদিন সন্ধ্যার আগে একটি বোট নদীর মাঝখানে বিকল হয়ে পড়ে। যাত্রী নুর উদ্দিন জানান, “ফোন করেও মালিকের সাড়া পাইনি। পরে ঘাট থেকে অন্য বোট এনে আমাদের উদ্ধার করা হয়।”

বোট মালিকদের নতুন গঠিত কমিটির সভাপতি জাকের হোসেন কালু স্বীকার করেছেন, “লাইনে শৃঙ্খলা ফেরানো এখনো সম্ভব হয়নি। লাইনম্যানরা নিজেদের মতো চলছেই।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন জানান, “সম্প্রতি ২৮ যাত্রীকে নিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। তাই নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হচ্ছে। কোন বোট চলবে, কতজন যাত্রী বহন করবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও কয়েকদিনের মধ্যে আবারও আগের চিত্রেই ফিরে যায় রুট। ফলে সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতদিন প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান নিশ্চিত না হবে, ততদিন মেঘনার এই যাত্রাপথ থেকে মৃত্যুভয় দূর হবে না।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন