ডার্ক মোড
Friday, 22 November 2024
ePaper   
Logo
যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের সমাপ্তি

যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের সমাপ্তি

যুুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে নিউইয়র্কসহ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্ব-মানবতার শান্তি এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি সুসংহত করতে দুর্গাদেবীর আশির্বাদ এবং আনন্দলোকের মঙ্গলালোকে অন্যরকম অনুভূতি আর ভিন্নতর ভালোবাসায় উদ্বেলিত হোক সকল প্রবাসী হিন্দুর মন-প্রাণ-এই ছিল সবার অন্তরের কামনা। আর এমন ধর্মীয় আমেজেই ৫ দিনব্যাপী পূজা-উৎসবের সমাপ্তি ঘটলো ১২ অক্টোবর শনিবার বিজয়া দশমীর মাঝদিয়ে। এই উৎসব ঘিরে সর্বত্র ধর্মীয় সম্প্রীতির অপূর্ব সমাগম ছিল।

প্রধান প্রধান উৎসবের আয়োজন করা হয় জ্যামাইকায় হিলসাইড সংলগ্ন শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের মন্দির, বাংলাদেশ বেদান্ত সোসাইটির উদ্যোগে গোল্ডেন ইয়্যার পার্টি হল, সর্বজনীন পূজা উৎসব কমিটির উদ্যোগে উডসাইডে দিব্যধাম মন্দির, কুইন্স ভিলেজে সনাতন সেবাসংঘ মন্দির, গুলশান টেরেসে পূজা উদযাপন পরিষদ, ময়ামায়া মন্দিরে সর্বজনীন পূজা উৎসব, ব্রæকলীনে গৌর নিতাই মন্দির, জ্যাকসন হাইটসে ওঁমশক্তি মন্দিরে। নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেট্স, ভার্জিনিয়া, ম্যরিল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, মিশিগান প্রভৃতি স্থানে শতাধিক পূজামন্ডপ স্থাপিত হয়।

তিথিমতে পূজার যাবতীয় শাস্ত্রীয় কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা হয়। বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল পূজার্চনা, আরতি, প্রবাস প্রজন্মের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা, ঢাকা-কলকাতার খ্যাতনামা শিল্পীগণের পরিবেশনা, ধর্মসভা,আয়োজক সংগঠনের সদস্য- সদস্যাদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুঁথি পাঠ,কীর্তন, সিঁদুর খেলা ও মহাপ্রসাদ বিতরণ। প্রায় প্রতিটি পূজামন্ডপের প্রবেশদ্বারেই ছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিন্দাসূচক ব্যানার।

জ্যামাইকায় শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘে সমবেত শত-সহ¯্র ভক্ত-অনুরক্তগণের সামনে এই সংগঠনের চেয়ারপার্সন ডা. প্রভাত দাস প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশে দুর্গোৎসব স্থলে নিরাপত্তার নামে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। অথচ এই নিউইয়র্ক তথা আমেরিকায় একেবারেই অপরিচিত সমাজে আমরা পূজা করছি নির্বিঘœচিত্তে, এখানে তো পুলিশ-প্রশাসনের দরকার হচ্ছে না। এথেকেই অনুধাবন করতে পারি যে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের পর গঠিত ড. মুহম্মদ ইউনূসের সরকারও। একইভাবে কুইন্স ভিলেজে সনাতন সেবাসংঘের পূজামন্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্যকালে এই সংগঠনের উপদেষ্টা অজিৎ ভৌমিক বলেন, আমরা আশা করেছিলাম শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো।

শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের পরিচালক রূপকুমার ভৌমিক বলেছেন, চট্টগ্রামে জামাত-শিবিরের লোকজন পূজামন্ডপে গিয়ে ইসলাম ধর্মীয় সঙ্গিত পরিবেশন করে সকলকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন । এটা কী ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিপূরক? শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের অপর পরিচালক সুশীল সাহা অভিযোগ করেন, আমরা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের এই পূজা উৎসবে ৫দিনব্যাপী উদ্দীপনী ধর্মীয় সঙ্গীতের সার্বিক সমন্বয়ে থেকে নেতৃত্ব দেন সবিতা দাস। ইঞ্জিনিয়ার রঞ্জিত রায়ের পরিচালনা ও নির্দেশনায় ছোট্টমণিদের অভিনয়ে মঞ্চস্থ ‘জগৎ-জননী দুর্গা’ নাটকটিও উৎসবের আমেজকে উদ্ভাসিত করে। পূজা-উৎসবে আগতদের স্বাগত জানাতে ৫দিনই প্রবেশ পথে ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারি অর্ধেন্দু কুমার বিশ্বাস, পরিচালক সুভাষ সাহা, ড. প্রদীপ করসহ বিশিষ্টজনেরা।

কুইন্স ভিলেজে সনাতন সেবাসংঘের পূজা-উৎসবের সকল কর্মসূচির সমন্বয়ম ঘটিয়েছেন সভাপতি ডা. নিহার সরকার, সেক্রেটারি দীপঙ্কর রায়, উপদেষ্টা অজিৎ ভৌমিক-সহ বেশ কয়েকজন। শতশত শিশু নিয়ে অভিভাবকেরা এতে অংশ নেন।
নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির প্রবাসী বাংগালি হিন্দুরা মেতে ছিলেন দুর্গোৎসবের হরেক আয়োজনে। শারদোৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল আটলান্টিক সিটি। আটলান্টিক সিটির ১০৯, উত্তর ফ্লোরিডা এভিনিউতে অবস্থিত প্রবাসী হিন্দুদের মন্দিরে ৮ অক্টোবর মংগলবার থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল। ১২ অক্টোবর, শনিবার দুর্গোৎসব শেষ হয়। দুর্গোৎসবে তিথিমতে পূজার যাবতীয় শাস্ত্রীয় কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা হয়।

আয়োজক সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা নিবেদিতা ভট্টাচার্যেও সার্বিক তত্ত¡াবধানে শারদোৎসবে প্রবাস প্রজন্মের শিশু- কিশোরদের পরিবেশিত অনুষ্ঠানগুলো সবাই প্রাণভরে উপভোগ করেন। আবালবৃদ্ধবনিতার বাহারি সাজ ও নয়নাভিরাম পোশাক-আশাকে দুর্গোৎসব প্রাঙ্গন হয়ে উঠেছিল শারদোৎসবের রঙে রংগীন। প্রবাসী হিন্দুদের সব পথ এসে যেন মিশেছিল মন্দির প্রাংগণে। তারা সারাক্ষণ মেতে ছিলেন আনন্দযজ্ঞে।

দুর্গাপূজার এই কয়েকটা দিন আটলান্টিক সিটির প্রবাসী হিন্দুরা মেতে ছিল অনাবিল আনন্দে। আনন্দলোকের মঙ্গলালোকে অন্যরকম অনুভূতি আর ভিন্নতর ভালোবাসায় উদ্বেলিত হোক সকল প্রবাসী হিন্দুর মন-প্রাণ, এই ছিল সবার অন্তরের কামনা।

যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের সমাপ্তি

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন