ডার্ক মোড
Monday, 23 December 2024
ePaper   
Logo
মাইলেজের দাবি পূরণ না হওয়ায় আবারও ভোগান্তিতে পড়বেন ট্রেনের যাত্রীরা

মাইলেজের দাবি পূরণ না হওয়ায় আবারও ভোগান্তিতে পড়বেন ট্রেনের যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবির বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় আবারও নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টায় ফিরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমাস্টাররা। তারা ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। এতে লোকোমাস্টার সঙ্কটে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলা ট্রেনগুলো আবারও বিলম্বের শিকার হবে। আবারও ভোগান্তিতে পড়বেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মাইলেজ প্রদানের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে যাব। আমরা অনেক চিঠিপত্র, আবেদন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। তাই ১ জানুয়ারি থেকে আমাদের সংগঠন সদস্যরা নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। আমরা যারা ২০২২ সালের আগে রানিং স্টাফ হিসেবে যোগ দিয়েছি, তারা ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করবো না। রেলওয়ের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব-লোকোমাস্টার (এসএলএম) সবাই এই সিদ্ধান্তে একমত।

জানা গেছে, আইন অনুযায়ী— ৮ ঘণ্টার ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার কথা। কিন্তু রেলওয়ের কর্মী সংকট থাকায় তারা ৫/৬ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজে নেমে যান। রেলের কর্মীরা রেলের স্বার্থে কাজ করতে চান। কিন্তু রেলওয়ে তাদের স্বার্থের বিষয়ে আন্তরিক নয়। এর প্রতিবাদে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেমেছেন তারা।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।

মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে গত ৩ বছর সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা এবং ধর্মঘট পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলপথ সচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা।

মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, এটা ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। ১৬০ বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। আমরা ওনাদের বারবার সময় দিয়েছি, বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলছি।

এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নবনিযুক্ত এএলএম গ্রেড-২ এবং গার্ড গ্রেড-২ এর রানিং স্টাফদের নিয়োগপত্রের যে শর্ত ছিল তা প্রত্যাহার করা হবে। তার মানে তারা রেলের নানা সুযোগ সুবিধা পাবেন। শর্ত প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত তারা কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে যে মাইলেজ অর্জন করবেন তা বকেয়া হিসেবে পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের আইবাস সিস্টেমে বেতন ভাতাদি ও মাইলেজ যথানিয়মে পরিশোধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রানিং স্টাফদের মাইলেজ ও পেনশনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন