ডার্ক মোড
Saturday, 19 April 2025
ePaper   
Logo
বান্দরবান মেঘলা চিড়িয়াখানা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ—  ৩১ বছর পর অবৈধ ঘোষণা

বান্দরবান মেঘলা চিড়িয়াখানা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ— ৩১ বছর পর অবৈধ ঘোষণা

 

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান, :
অবৈধভাবে সংরক্ষন করায় বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের চিরিখানা থেকে ১১ টি বণ্য প্রাণী উদ্ধার করেছে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষন ও জীববৈচিত্র বিভাগ। বুধবার বিকালে মেঘলা চিরিয়া খানা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে ডুলা হাজারা সাফারী পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের চিরিয়াখানায় পর্যটকদের বিনোদনের জন্য খাঁচায় বন্দী করে সংরক্ষন করা হচ্ছিল
বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী। তাদেরকে যথাযথ ভাবে লালন পালন না করা ও সংরক্ষনের অনুমতি না থাকায় এসব বন্যপ্রানী উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, বান্দরবানের বিভিন্ন বন ও পাহাড় থেকে উদ্ধার হওয়া বণ্যপ্রাণী সংরক্ষনের জন্য রাখা হত মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের চিড়িয়াখানায়। সেখানে একদিকে যেমন সংরক্ষন করা হত তেমনি পর্যটকদের বিনোদনের জন্য সেগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে
প্রদর্শন করা হত। দীর্ঘ দিন ধরে চিড়িখানায় বণ্যপ্রাণী গুলোকে লালন পালন করে আসছিল জেলাপ্রশাসন। কিন্তু স¤প্রতি ন্যাচার বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন চিড়িয়াখানায় একটি ভাল্লুক অসুস্থ্য হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এমন
একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দিলে তা একজন বিচারকের নজরে আসলে গত ১০ মার্চ আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে অসুস্থ্য ভাল্লুকটির চিকিৎসা ও বণ্যপ্রাণী আইন মেনে চিড়িয়াখানায় বণ্যপ্রাণী সংরক্ষন করা হচ্ছে কিনা সেবিষয়ে তদন্ত কমিটি করে একটি আদেশ দেন। এরপর বিষয়টি বন্যপ্রানী সংরক্ষন ও জীববৈচিত্র বিভাগের নজরে আসলে তারা মেঘলা চিড়িয়া খানায় এসে
অসুস্থ্য ভাল্লুকটিসহ মোট ১১ টি বণ্য প্রাণী উদ্ধার করে ডুলা হাজারা সাফারী পার্কে নিয়ে যায়।
এদিকে দীর্ঘ বছর পর অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসা মেঘলা চিড়িয়াখানা বন্ধ ঘোষণা করায় স্বত্বি প্রকাশ করেছে ন্যাচার বাংলাদেশ সংগঠনের সদস্যরা। তারা বলেন, আমরা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে আসছি। ফেইসবুকে একটি ভিডিও মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে অনুমোদন বিহীন অবৈধভাবে চিড়িয়াখানার নামে কাচায় বন্দি করে বন্যপ্রাণীদের অমানবিক কাজ করে আসছিল। এরপর আমরা মেঘলা চিড়িয়াখানা থেকে বন্যপ্রাণীগুলো উদ্ধারে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলাম। অবশেষে
প্রশাসন বিষয়টি নজরে এনে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশী। অন্যদিকে বান্দরবানের মেঘলা চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কোন ধরনের পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেন ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক এর ভেটেনারি অফিসার হাতেম মোহাম্মদজুলকারনাইন। তিনি বলেন, তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত

করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্যপ্রাণীগুলো অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা দেয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না, যে পরিমাণ জায়গা এবং আলোবাতাসের প্রয়োজন সেটাও ছিল না। বন্য প্রাণী গুলোর যথাযথ লালন পালন ও চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এক কথায় এখানে বন্যপ্রাণীদের সাথে এক প্রকার অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে আমরা মেঘলা চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণীগুলো ডুলহাজারা সাফারীপার্ক এ নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে তাদেরকে চিকিৎসা এবং উন্মুক্ত পরিবেশে সংরক্ষণ করা হবে। নিয়ম মেনে বান্দরবানের মেঘলা চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র কর্মকর্তা নুর জাহান বলেন, দেশীয় প্রজাতির প্রাণী রাখা বা সংরক্ষণের কারোর অধিকার নেই। সেই হিসেবে বলতে গেলে আইনত অপরাধ। এছাড়া ও বাংলাদেশ সরকার
চিত্রা হরিণের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে, কিন্তু এখানে মায়া হরিণ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সে হিসেবেও এটা অবৈধ। তিনি আরও বলেন, ব্যাঙের ছাতার মত যেখানে সেখানে চিড়িয়াখানা হোক বা বন্যাপ্রাণীর উপর অত্যাচার এটা আমরাও চাইনা। সেটার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে আমরা কাজটা করে যাচ্ছি। বান্দরবানের মেঘলা চিড়িয়াখানা যেসব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছিল তা আমরা উদ্ধার করে ডুলাহাজারা সাফারিপার্ক নিয়ে যাচ্ছি এবং এ ধরনের উদ্যোগ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সাল থেকে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির বণ্য প্রাণী সংরক্ষন করে আসছিল

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন