
বাউবি কর্মকর্তার প্রাণনাশের চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) পরীক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সোয়েব হোসেনের (৪০) উপর হামলা ও প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে একদল পোশাকধারী দুস্কৃতিকারী। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর প্রধান কার্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় তলায় ৫/৬ জনের আনসার বাহিনীর একটি দল প্রথমে তার কক্ষে প্রবেশ করে।
এরপর পরই ১০/১২ জন পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত পোশাকের লোকজন সোয়েবের কক্ষে ঢুকেই দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার উপর এলোপাথারী হামলা চালায়। ফলে, সোয়েব হোসেনের পিঠে, ঘাড়ের ডান দিকে গুরুতর জখম হয়। তার চিৎকারে পাশের কক্ষের সহকর্মীরা বেরিয়ে এলেও অস্ত্র এবং পোশাকধারী বেপরোয়া আনসার বাহিনীর ভয়ে রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে পারেনি তারা। সোয়েবের বাসায় ফোন দিলে আহত অবস্থায় তার স্ত্রী উদ্ধার করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যাক্ষদর্শী, একই বিভাগের যুগ্ম পরিচালক রাফেল মাহামুদ বলেন, বাউবির মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ পড়ে ফেরার সময় আমরা সোয়েব সাহেবের রুম থেকে প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছিলাম। সাথে সাথে ছুটে এসে দেখি, দেশিয় অস্ত্র ও লাঠিশোটা নিয়ে আনসার বাহিনীসহ কয়েকজন তাকে হাত পা বেঁধে মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছে।
তার গলা বেয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়ছে, কী বিভৎস্য এক দৃশ্য! এ সময় হামলাকারীরা বলতে থাকে, আওয়ামী লীগের কাউকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আরেক প্রত্যাক্ষদর্শী উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হাই বলেন, এমন ভয়ঙ্কর সময়ে আমরা কার কাছে সাহায্য চাইবো, বুঝতে পারছি না। উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার স্যার কেউ-ই প্রাণ ভয়ে নিরাপত্তার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস করতে আসেন না। অন্যদিকে, গাজীপুরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী নিজেরাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি এখানকার থানাগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশে আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই এখন। বাউবির অফিস কক্ষগুলো রাতারাতি দখল করে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সোয়েব সাহেবকে পোশাকধারী বাহিনী হত্যার উদ্দেশ্যে এলো অথচ আমরা কেউ টু শব্দটিও করতে পারলাম না। এটা আমাদের জন্য কষ্টের।
সোয়েবের স্ত্রী তানিয়া তানভি বিকেলে এই প্রতিবেদককে জানান, সোয়েব বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে। তার জ্ঞান এখনো ফেরেনি। গলায় ও পিঠে ভোতা অস্ত্রের কয়েকটি কোপ লেগেছে, সেলাই পড়েছে ১৬টি। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই বলে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমরা পুরো পরিবার প্রাণভয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে দিনানিপাত করছি। গত সপ্তাহে আমরা শ্বশুর বাড়িতেও হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর চালিয়েছে দুস্কৃতিকারীরা।
এ বিষয়ে বাউবির রেজিস্ট্র্রার ড. মহা. শফিকুল আলম টেলিফোনে জানান, সোয়েবকে গত কয়েকদিন ধরেই একটি গোষ্ঠি প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। বিষয়টি আমাদের সাথে শেয়ার করেছে সে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অসহায়, নিরাপত্তাহীন। তাকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেই। চাঞ্চাল্যকর ঘটনাটি নিয়ে গাছা থানার ওসি হামিদুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের ঘটনা। নিরাপত্তার জন্য তাদের নিজস্ব আনসার বাহিনী ক্যাম্পাসের দায়িত্বে আছে। সেই আনসার বাহিনীই দুস্কৃতিকারীর মতো হামলা চালিয়েছে বলে শুনেছি। এখন সেখানকার পরিবেশ শান্ত। প্রধান ফটকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন কাজ করছে। তবে, এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি।