ডার্ক মোড
Wednesday, 23 April 2025
ePaper   
Logo
ফ্যাস্টিস আওয়ামী খুনিদের বিচার আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরে নির্বাচন:লালমনিরহাটের জনসভায় ডাঃ শফিকুর রহমান

ফ্যাস্টিস আওয়ামী খুনিদের বিচার আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরে নির্বাচন:লালমনিরহাটের জনসভায় ডাঃ শফিকুর রহমান

 

মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট ।।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনের আগে অবশ্যই দুটি কাজ সর্ম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে ফ্যাস্টিস আওয়ামী খুনিদের বিচার, এ দৃশ্যমান হতে হবে, আর একটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন মেনে নিবে।

তিনি শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখ সকালে লালমনিরহাটের কালেক্টরেট মাঠের এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সুষ্ঠ নির্বাচন চাই, কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাব যুক্ত নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। সেজন্য অবশ্যই নির্বাচনের সমতল মাঠ তৈরি করতে হবে।

ভারতের সাথে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশি হিসাবে বসবাসের দাবী জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকবে। আমাদের ভালো কেড়ে নিলে ভারতকে চিন্তা করতে হবে তারা ভালো থাকবে কিনা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ শফিকুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও কিছু কু-রাজনীতক চাঁদাবাজি-দখলবাজি করছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান, নিরাপত্তা ও কাজের ব্যবস্থা করবে বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহ লালমনিরহাটের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান।

লালমনিরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

এর আগে জনসভায় যোগ দিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলের কর্মী-সমর্থকরা সকাল থেকে মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এ জনসভাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসবের আমেজ। কালেক্টরেট মাঠ ছাড়াও শহরের অপর একটি মাঠে মহিলাদের জন্য বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, গুম করে আয়না ঘরে বন্দী করেও বাংলাদেশের জনগন কে দাবীয়ে রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আন্দোলনের চাপে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তারা দেশ কে ভালো বাসে না। মহান আল্লাহ, ফেরাউন কে যে ভাবে বিদায় দিয়েছে। সেই ভাবে আওয়ামী লীগ বিদায় হয়েছে। জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কোন সরকার ঠিকে থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগও ঠিকে থাকতে পারেনি। ফ্যাস্টিস ও ফ্যাসিবাদীর পতন চেয়েছি। এখনো ফ্যাসিবাদী রয়েছে। সাধারণ মানুষ নির্যাতনের শিকার। চাঁদাবাজি ও দখলবাজ বন্ধ হয়নি। চাঁদাবাজ ও দখলবাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এক সাথে সবাই কে এগিয়ে আসার আহবান জানান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সত ও যোগ্য নেতাকর্মী তৈরি করছে। শহীদ মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ সততা ও সুনামের সাথে মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন দূর্নীতি পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী দের নুন্যতম বেতন দেওয়া ও এমন শিক্ষা ব্যবস্হা চালু করা হবে যে তাদের কাছে সকলেই সম্মান পাবে। তাদের বৈশ্বিক শিক্ষার উৎকর্ষ ঘটবে। চাকুরীর জন্য হর্ণ হয়ে ছুটা লাগবে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ চিএ দেখতে চায় না। কৃষক কে উৎপাদনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। কৃষকের যে সব পন্য পচে যাওয়ার মতো। সে সব পন্য সংরক্ষণের ব্যবস্হা নিতে হবে। অনেকে বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মহিলাদের বের হতে দিবে না। এসব কথা সঠিক নয়। তিনি বলেন, মহিলারা সম্মান নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন। ইসলামী আইন চালু হলে নারীদের প্রতি চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলতে পারবে না। সনাতনধর্মের জন্য নিরাপত্তা আইন করা হবে। হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের কে পাশে পাবেন। জামায়াতের প্রত্যক নেতাকর্মীদের কঠিন ও সততার প্রতি অটোল থেকে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান তিনি। সনাতনধর্মের লোক জন কে সংখ্যা লঘু বলা যাবে না। তারাও আমাদের দেশের মানুষ । তাদের প্রতি কারা হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট চালিয়েছে, দেশবাসী জানেন। ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জনগন কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন আমীরে জামায়াত। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এটি এম আজহারুল ইসলাম কে, সুসম্মানে ফিরে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিএসএফ কতৃক হাতীবান্ধার সির্ন্দুনা সীমান্তে হাসিবুল আলম (২২)হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন তিনি। লালমনিরহাটের বিমানবন্দর চালু, অ্যারোসপোস্প বিশ্ববিদ্যালয়ের স্হায়ী ক্যাম্পাস নিমাণ, মোগলহাট স্হল বন্দর চালু, টেকসই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য মেডিকেল স্হাপন ও শিল্পকারখানা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন, আমীরে জামায়াত। আমীরে জামায়াত সকাল ১১ টা ২৫ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে ১১ টা ৫৭ মিনিটে শেষ করেছেন। এ বিশাল জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের গৌরব শহীদ আবু সাঈদ। তার গৌরব কে ধারন করে সবাই কে বাংলাদেশ বৈষম্য মুক্ত ও চাঁদাবাজ মুক্ত সমাজ গঠনে প্রশাসন কে সহযোগিতা করার আহবান জানান। সেই সাথে নিরপরাধ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এটি এম আজহারুল ইসলাম এর অবিলম্বে মুক্তির দাবী জানিয়েছেন তিনি, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন বলেন, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে ইনসাফের কথা সবাই বলে। কিন্তু কেউ ইনসাফ ভিত্তিক চলে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসলামি আইন চালু করতে চায়। ওই আইন চালু হলে কোন মানুষ ন্যার্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর হাসিনার বন্দীশালা থেকে মুক্তি পেয়েছি। ছাএ জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। তাই এ বাংলাদেশে আলেম- ওলামা হত্যাকারী সরকার আর দেখতে চাই না। আমরা আর ভূয়া নির্বাচন দেখতে চাই না। আগামী নির্বাচন সংস্কারের পরে দেওয়ার কথা বলেছেন, তিনি। আরও বক্তব্য রাখেন, লালমনিরহাট ( আদিতমারী - কালীগঞ্জ) -২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জননেতা ও লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মোঃ ফিরোজ হায়দার লাভলু, লালমনিরহাট - ( পাটগ্রাম - হাতীবান্ধা) - ১ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জননন্দিত নেতা মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম রাজু ও লালমনিরহাট - সদর- ৩ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জনপ্রিয় নেতা প্রভাষক মোঃ হারুনুর রশিদ, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারী হাফেজ শাহআলম, লালমনিরহাট জেলা ছাএ শিবিরের সভাপতি মোঃ আব্দুল মোতালেব, বৈষম্য বিরোধী ছাএ আন্দোলন এর লালমনিরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব মোঃ হামিদুর রহমান, লালমনিরহাট জেলা শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ রেনায়েল আলম, সাবেক জেলা আমীর প্রভাষক আতাউর রহমান, সাবেক জেলা আমীর ও জামায়াতের রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল ইউনিট টিম সদস্য মোঃ আব্দুল বাতেন, খেলাফত মজলিসের লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি মুফতি আবুল কাশেম, লালমনিরহাট জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু মূসা, লালমনিরহাট সদর উপজেলা আমীর প্রভাষক মাহিবুর রহমান, শহর আমীর মাওলানা জয়নাল আবেদীন, আদিতমারী উপজেলা আমীর মাওলানা হায়দার আলী, কালিগন্জ উপজেলা আমীর মাওলানা রুহুল আমিন, হাতীবান্ধা উপজেলা আমীর প্রভাষক হাছান আলী, পাটগ্রাম উপজেলা আমীর, কবিতা পাঠ করেন বিশিষ্ট কবি, সাবেক জেলা সেক্রেটারী ও পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আলাউল ইসলাম ফাতেমী পাভেল, রংপুর জেলা আমীর অধ্যাপক মোঃ গোলাম রাব্বানী, কুড়িগ্রাম জেলা আমীর মোঃ আব্দুল মতিন,জামায়াত নেতা মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম কাজল, রংপুর মহানগর আমীর এটি এম আজম খান, হাতীবান্ধা উপজেলা হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি পুস্পজিত বর্মন, এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, বিগত সরকার হিন্দুদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। আমীরে জামায়াত তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কোন সংখ্যা লঘু শব্দ থাকবে না। যে বাংলাদেশে জন্ম নিবেন। সেই বাংলাদেশী। হিন্দু ধর্মের পরিবার কে জামায়াত দিন- রাতে নিরাপত্তা দিয়েছে। তাদের সাথে আমরা হিন্দুরা আছি এবং এবার ভোটও দিবো। এবক্তব্য দিয়ে তিনি স্লোগান এ বলেন, জাগো বাহে হিন্দুরা সবাই এগিয়ে আসো , হিন্দুধর্মের লোক এবার জামায়াত কে ভোট দিবো। তিনি সবাই কে এবারের ভোটে জামায়াত কে ভোট দেয়ার অনুরোধ করেছেন। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, সনজিত কুমার বর্মন। অনুষ্ঠান টি পরিচালনায় ছিলেন, লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী এ্যাডভোকোট মোঃ ফিরোজ হায়দার লাভলু। অনুষ্টানের শুরুতেই কোরআন তেলওয়াত এর পর ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন, লালমনিরহাট জেলা ছাএ শিবিরের সাবেক সভাপতি মোঃ ফজলুল হক শামিল ও তার টিম। বিশাল জনসভা শেষে আমীরে জামায়াত লালমনিরহাট সাকিট হাউজে বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছেন। পরে তিনি হাতীবান্ধা সির্ন্দুণা সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হাসিবুল আলমের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপনের জন্য তার বাড়ীতে গেছেন। এদিকে ৪ টি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছিল। মাঠ গুলো হচ্ছেঃ- মূল মাঠ লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠ, রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী মাঠ, শেখ ফজলুল করিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও মজিদা খাতুন মহাবিদ্যালয় মাঠ। ৪ টি মাঠের মধ্যে মজিদা খাতুন মহাবিদ্যালয় মাঠে মহিলাদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায় মাঠ। বাংলাদেশ রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী মাঠে গ্যারেজ করা হয়েছিল। বিশাল জনসভায় লোক সমাগম ছিলো চোখে পড়ার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোড়দার ছিল।

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন