
কোনভাবেই নির্বাচন জুন পার করা যাবে না— জামায়াত সেক্রেটারী
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান,
আগামী নির্বাচনী কোন ভাবেই ২০২৬ এর জুন পার করা যাবে না। এর আগে তিনটি বিষয় সংস্কার করে যেকোন সময় নির্বাচন দিলে জামায়াতের কোন সমস্যা নাই। জামায়াত সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় রাজার মাঠে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বান্দরবান জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত বিশাল কর্মী ও সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এসময় তিনি আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার এ দেশের
অর্থনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি জামায়াত জয়লাভ করে সংসদে যেতে পারে তবে বাংলাদেশের আইন কাঠামো পরিবর্তন করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো এবং ৭২ সংবিধান
পরিবর্তন করে একটি সুন্দর সুশাসন ভিত্তিক সংবিধান গড়ে তোলা হবে। এসময় তিনি আরও বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা পার্বত্য এলাকায় শান্তি চুক্তির নামে অশান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে শিক্ষা চাকরি ভূমির ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। জামায়াত ইসলামী ক্ষমতায় এলে তা
দূর করবে। তাই তিনি ৩০০নং বান্দরবানে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এ্যাড. মোহাম্মদ আবুল কালামকে আগামী নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে সংসদে পাঠানোর আহ্বান জানান জামায়াতের কেন্দ্রীয় এ নেতা।এর আগে জামায়াত এর কর্মী ও সুধী সমাবেশকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলে দলে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে সমাবেশ স্থল স্থানীয় রাজার মাঠে জড়ো হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমীর এসএম আবদুচ ছালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য মাওলানা
মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন, কক্সবাজার জেলা আমীর অধ্যক্ষ নুর আহম্মদ আনোয়ারী,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আমীর অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার
আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম, চট্টগ্রাম দক্ষীণ জেলার আমীর এড.আনোয়ারুল আলম চৌধুরী,চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আমীর আলাউদ্দীন সিকদার, বান্দরবান পার্বত্য জেলার নায়েবে আমীর ও জেলা পরিষদের সদস্য এ্যাড. মুহাম্মদ আবুল কালামসহ জেলা—উপজেলার নেতৃবৃন্দরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৬ বছরে আমাদের প্রতিটি অফিসে তালা লাগানো হয়েছে। আমরা ঘরে থাকতে পারিনি, আমাদেরকে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার—নিপীড়ন করা হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসিতে ঝূলিয়ে হত্যা করা
হয়েছে। তাই আওয়ামীলীগের মতো ফ্যাসিস্টদেরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। যে কল্যাণ রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে, বনে—জঙ্গলে খালে বিলে আর লুকিয়ে রাত কাটাতে হবেনা, দারিদ্র বিমোচন হবে, দেশ অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ
হবে। সেই আলোকে জামায়াতের আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে এই কর্মী ও সুধী সমাবেশের আয়োজন।
বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমির এসএম আবদুচ ছালাম আজাদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠের বাংলাদেশ জামায়াতে ইলামীর এ কর্মী ও সুধী সমাবেশ হচ্ছে বান্দরবানের ইতিহাসের স্মরণকালের কর্মী ও সুধী সমাবেশ। বান্দরবানে চার দলীয় ঐক্যজোট সরকারের আমলের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বান্দরবান জেলার এটিই হচ্ছে সর্ববৃহৎ কর্মী ও সুধী সমাবেশ। এসমাবেশে কয়েক হাজার জামায়াতে ইসলামীর—নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন।উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রকাশ্যে এই প্রথমবারের মত বান্দরবানের ঐতিহাসিক রাজার মাঠে
কর্মী সমাবেশ করলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে
জনসমুদ্রে পরিণত হয় সমাবেশস্থল।