
পুঁজিবাজারে আগ্রহ বড় বিনিয়োগকারীদের, বেড়েছে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা
টানা উত্থান ও লেনদেনে চাঙ্গাভাবের কারণে পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ফিরে আসছে বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টের (বিও) সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিএসইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নানা মহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমছে বলা হলেও আসল তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। এক বছরে বাজারে কমেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা, বেড়েছে বৃহৎ বিনিয়োগ।
গত বছরের জুনের তুলনায় চলতি বছর একই সময়ে বাজারে ৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকার পোর্টফোলিওর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকার ওপরেও যেসব পোর্টফোলিও আছে তার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
বছর ব্যবধানে যাদের বিনিয়োগ ১ লাখ টাকার নিচে কেবল এমন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ লাখ টাকার নিচের পোর্টফোলিওর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৫৭, যা এ বছর একই সময়ে কমে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৮ তে দাঁড়িয়েছে।
কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাবৃদ্ধি
যেসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওর ভ্যালু ১ কোটি টাকার ওপরে গত বছর জুন মাসে তাদের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯৯৩, যা চলতি বছর বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৩১৬। ১০ কোটি টাকার ওপরে পোর্টফোলিওর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় তিনটি কমলেও বেড়েছে ৫০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা।
৫০ কোটি টাকার ওপরে গত বছর জুনে বিনিয়োগকারী ছিলেন ৬৯৬ জন, যা এ বছর বেড়ে হয়েছে ৭৩৩ জন। একইভাবে ১০০ কোটি টাকার ওপরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২২ জন এবং ৫০০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে দুজন।
সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জগুলো বলছে, বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে টাকা ধরে রাখছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
মতিঝিলের গ্লোবাল সিকিউরিটিজের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ মিয়া বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা টানা পতনের ধাক্কা সামলাতে না পারলেও বড় বিনিয়োগকারীরা টাকা ধরে রেখেছেন। কারণ দীর্ঘমেয়াদে বাজারে অর্থলগ্নি করলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তুলনায় বাজার এখন বড় বিনিয়োগকারী-বান্ধব উল্লেখ করে প্রায় এক দশক ধরে পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত এক বিনিয়োগকারী তারেক হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তারা ট্রেডিং করি, আর যারা বড় বিনিয়োগকারী তারা ইনভেস্ট করেন। ট্রেডিংয়ে উদ্দেশ্য থাকে মাসের লাভ মাসে তুলে নেওয়া। অনেকে আবার প্রতি সপ্তাহেও লাভ তুলতে চান। কিন্তু বড় বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানির শেয়ারে বছরের পর বছর অর্থলগ্নি করে। এতে বাজারে সাময়িক পতন হলেও পরবর্তীতে আবার বাজার ঘুরে দাঁড়ালে তারা লাভবান হন।’
ভালো আইপিওর প্রত্যাশা
বছর পেরিয়ে গেলেও ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিকে এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলমান রয়েছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বিএসইসির শক্তিমত্তা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী জানান, বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি ভালো সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিটি।
ভালো কোম্পানির আনার পাশাপাশি বাজারে নজরদারি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাজার নজরদারি বাড়াতে হবে। এতে বাজারে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। পাশাপাশি বাজার উন্নয়নে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
ভালো আইপিও আনার ওপর জোর দিয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, ‘একটি ভালো কোম্পানি পুরো বাজারের চিত্র বদলে দিতে পারে। দেশীয় সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানিকেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে ভাবতে হবে।’
ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে বিএসইসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। পাশাপাশি পুঁজিবাজার উন্নয়নে কমিটির নির্দেশনা ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ মেনে টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দেন তিনি।