ডার্ক মোড
Wednesday, 16 April 2025
ePaper   
Logo
পাবনায় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পাবনায় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 

 
পাবনা প্রতিনিধি:
সরকারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে পাবনার বেড়া মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সেলিম হোসেন মানিক বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন মামলার আসামিদের মধ্যে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছাড়াও তিনজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওলিউর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত শনিবার মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। তবে গতকাল রোববার রাতে মামলাটির কথা জানাজানি হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ এপ্রিল বিকেল পাঁচটার দিকে বেড়া পৌর এলাকার কাগমাইরপাড়ায় আবু সাইয়িদের নিজ বাড়িতে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ আসামি উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এলাকার সদস্য ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা–কমীরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করেন। সেখানে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, বন্দুকসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বর্তমান অন্তর্ব্তী সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। 
এছাড়া সমাবেশে বক্তব্যে ১৯৭১ সালে সাবেক জামায়াত আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন বলে মন্তব্য করা হয় বলেও এজাহারে বলা হয়েছে। মামলার সাক্ষী ও এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আসামিদের নাম –ঠিকানা জোগাড় করতে সময় লাগায় এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
১৬৪ জন আসামির মধ্যে আবু সাইয়িদকে এক নম্বর ও সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলামকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদের পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) আসনের আওতাধীন বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ফজলুর রহমান মাসুদ, বেড়া পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম, বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ দুলাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবু সাঈদ, সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল খান সানা, বেড়ার করমজা ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আলী বাগচী, চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, ব্যবসায়ী মতিউর রহমান দুলালসহ বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার  আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা প্রায় সকল নেতা ও অনেক কর্মীকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে তিনজন সাংবাদিককেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান স্বপন, সাঁথিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক মিয়া রানা ও সদস্য আবু শামা।
 
এ বিষয়ে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউর রহমান বলেন, ‘এটি মামলা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকার পাশাপাশি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৮ সালে তাঁকে বাদ দিয়ে শামসুল হক টুকুকে (সাবেক ডেপুটি স্পিকার) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। ব্যাপক কারচুপি ও জালভোটের অভিযোগ ওঠা সেই নির্বাচনে শামসুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে ফলাফল প্রত্যাখান করেন আবু সাইয়িদ।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তিনি বেড়ায় এসে কাগমাইরপাড়ায় অবস্থিত তাঁর নিজ বাড়িতে ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভার আয়াজন করেন। সেই সভায় তাঁর অনুসারীসহ আওয়ামী লীগের একাংশের অনেক নেতা–কর্মী যোগ দেন। এতে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে সমাবেশের প্রতিবাদে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় একাধিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা আবু সাইয়িদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
 
মামলার আসামি সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, আমাকে মামলায় ১১২ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। আমি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। অধ্যাপক আবু সাইয়িদের বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম না, এর সাথে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততাও নেই। অথচ যাচাই বাছাই না করে আমাকে আসামি বানিয়ে দিলো। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এদিকে, মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট দাবি করে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, সাজানো গালগল্পের এই মামলা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। আমি আমার নেতাকর্মীর সাথে প্রকাশ্য সৌজন্য সাক্ষাত করেছি। সেখানে গোপন কোন বৈঠক হয়নি। জামায়াতের নেতাদের ইচ্ছায় প্রশাসন মিথ্যা মামলা গ্রহণ করেছে। 
 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন