
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নদী ও সাগরে চলছে রেনু নিধনের মহোৎসব
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন সাগর সহ কলাপাড়া উপজেলার প্রতিটি নদীতে চলছে রেনু নিধনের মহোৎসব। প্রশাসনের নাকের ডগায় স্থানীয় জেলেরা চিংড়ি রেনু আহরন করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের রেনু মেরে ফেলছে। স্থানীয় কয়েকটি বাজারে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয় চিংড়ি রেনু পোনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় পর্যায়ে কুয়াকাটা সাগর তীরবর্তী বিভিন্ন বয়সের জেলেরা বিশেষ এক ধরনের জাল নিয়ে সৈকত সংলগ্ন সাগরে রেনু পোনা আহরণ করছে। প্রতি দুই কিলোমিটারে অন্তত ৫-৮ জন জাল টানছে। জালে ধরা পড়ছে চিংড়ি রেনু পোনা সহ শতাধিক প্রজাতির রেনু। শুধুমাত্র চিংড়ি রেনু বাদে বাকিগুলো ফেলে দেয়া হচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল ও বিকাল দুই বেলায় প্রত্যেকে ৫-৭ হাজার চিংড়ি রেনু আহরণ করতে পারে। একশ্রেণীর হকার জেলেদের কাছ থেকে রেনু সংগ্রহ করে আলিপুর, মহিপুর, হাজিপুর, লতা চাপলি, বাবলাতলা বাজার সহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্রয় করে। ওইসব বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে। অত্যন্ত গোপনে পরিবহন করার জন্য তারা নদীপথে ট্রলার এবং সড়কপথে পিক আপ ভ্যন, মাঝারি সাইজের ট্রাক ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করে।
আরো জানা যায়, রেনু আহরণ নিষিদ্ধ বিধায় অত্যন্ত গোপনে ক্রয় বিক্রয় ও পরিবহন করা হয়। তবে প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিদের জোকসোজোগে এই অবৈধ বেচাকেনার পথ নিরাপদ থাকে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অবৈধ রেনু আহরণের ব্যাপারে সংবাদসহ প্রশাসনকে সরাসরি অভিযোগ ও অবগত করেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এই অবৈধ কারবার। জলে কিংবা স্থলপথে পরিবহন করতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশাসনিক এলাকার সরকারি দপ্তরগুলো ম্যানেজ করে নিশ্চিন্তে এ অবৈধ কাজটি করে থাকে।
বিগত দিনে আওয়ামী দুঃশাসনে এই অবৈধ রেনু আহরন ও ক্রয়-বিক্রয় প্রচলন শুরু হলেও ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পরও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যনেজ করে এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। শুরু থেকেই এই রেনু ক্রয়-বিক্রয় কাজে এখনো ফ্যসিবাদের দোষররা চালিয়ে যাচ্ছে তবে তাদের সহযোগীতা করছে সরকারী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা এলাকায় এমন কিছু আমার চোখে পড়ে নাই। কলাপাড়া পার্শ্ববর্তী নদীগুলো যদি এমন কিছু হয়ে থাকে আমি খোঁজ নিচ্ছি। যদি এই চক্রকে আমরা ধরতে পারি তবে আইনানুক ব্যবস্থা নেব। উপজেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে অবধর এলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আমি মৎস্য অফিসারকে অনুরোধ করেছি এগুলো নিধনের জন্য তবে এখনো কোন অপারেশন চালানো হয়নি।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য সিনিয়র সহকারী পরিচালক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, রেনু পোনা সহ সকল ধরনের ছোট মাছ যেন না ধরতে পারে এজন্য চরগরা, বেহুতি, নেট জাল, সহ অবৈধ জাল জব্দ করার অভিযান চলমান। মৎস্য অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সম্মিলিতভাবে চতুর্থ ধাপের কম্বিন অপারেশন চলছে। এছাড়াও চিংড়ি রেনু ক্রয়-বিক্রয় ও আহরণ সংশ্লিষ্ট সকল অবৈধ কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা বছর বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে।