নকলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাবি শিক্ষার্থী রাচি
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
গতমাসে স্থান নির্ধারণ ও নামকরণ করা শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চরবড়ইগাছি গ্রামের পারিবারিক নতুন গোরস্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচিকে প্রথম মৃতব্যক্তি হিসেবে ২০ নভেম্বর বুধবার রাত পৌণে ৯টার দিকে সমাহিত করা হয়েছে। এটা তাদের পারিবারিক গোরস্থানের প্রথম কবর।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, আফসানা করিম রাচি (২০), শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চরবড়ইগাছি গ্রামের কৃতি সন্তান। সে রোডস এন্ড হাইওয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রেজাউল করিমের মেয়ে। বাবা-মায়ের ৩ ছেল ও ৩ মেয়ের মধ্যে রাচি ৫ম সন্তান এবং মেয়েদের মধ্যে সবার ছোট। আফসানা করিম রাচি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪ সেশন) প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা গেছে, ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাস্তা পারাপারের সময় অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহতের খবর পেয়ে সুদূর মালয়েশিয়া থেকে চলে আসেন রাচির মা কবিতা। কিন্তু দেশে এসে অতি আদরের ছোট মেয়ের মুখে মা ডাক শুনতে নাপেরে, এমনকি আর কখনো তার মুখ থেকে মা ডাক শুনতে পাবেননা; এটা ভাবতেই বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন রাচির মা।
নিহতের বন্ধু-বান্ধব সূত্রে যায়, ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাস্তা পারাপারের সময় আফসানা করিম রাচিকে পিছন থেকে একটি অটোরিকশা সজোড়ে ধাক্কা দেয়। এতে সে ছিটকে গিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে বন্ধু-বান্ধবরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সভারের এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আফসানা করিম রাচির অকাল মৃত্যুর সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পসসহ নিহতের রাজধানী ঢাকা ও গ্রামের বাড়ির এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে ক্যাম্পাসের ভিতরে সড়ক দুর্ঘটনা রোধসহ ৮ দফা দাবিতে রাতেই জাবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
বুধবার সকালে ঢাকার ধানমন্ডিতে নিহতের প্রথম জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বিতীয় জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় নিজ উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চকবড়ইগাছি জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এসময় নিহতের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্কুল-কলেজ জীবনের সহপাঠীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আফসানা করিম রাচির বাবা দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে রাজধানী ঢাকার গ্রীণ রোডস্থ নিজ বাসায় বসবাস করেন। তবে অবসরে যাওয়ার পরে মাঝেমধ্যে ময়মনসিংহ শহরের একটি বাসায় থেকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালদর এলাকায় নিজের মাছের খামার দেখভাল করেন এমনকি গ্রামের বাড়ির জমিজামার খোঁজখবর নিতে যেতেন। .
আর তার মা কবিতা একাকিত্ব কটাতে সময় পেলেই প্রতিষ্ঠিত ছেলে ও মেয়েদের বাসাবাড়ীতে ঘুরতে যেতেন। সময় কাটাতে ঘুরাঘুরির অংশ হিসেবে আফসানা করিম রাচির মা ঘটনার দিন মালয়েশিয়ার প্রবাসী বড় ছেলের কাছে ছিলেন। মেয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের খবর পেয়েই ছুটে আসেন দেশে। কিন্তু দেশে এসে শুনেন, আর কখনো তার মেয়ের মুখ থেকে মা ডাক শুনতে পাবেননা; এটা ভাবতেই বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন রাচির মা। কেউ বুঝাতে পারছেন না মেয়ে হারা মাকে। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন বাবা।
আফসানা করিম রাচি ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র কয়েকটি ক্লাস করার পরেই তার ইহকালীন জীবনের সমাপ্তি ঘটে। আর একটি মেধাবীর জীবনও যেন এমন ভাবে সড়কে না ঝড়ে এ দাবী সর্বসাধারণের।