ডার্ক মোড
Saturday, 26 April 2025
ePaper   
Logo
চাকুরীর পিছনে না ছুটে  দেশী - বিদেশি ফল বিক্রি করে লালমনিরহাটের মোখলেজের ভাগ্যের পরিবর্তনের গল্প

চাকুরীর পিছনে না ছুটে দেশী - বিদেশি ফল বিক্রি করে লালমনিরহাটের মোখলেজের ভাগ্যের পরিবর্তনের গল্প

 
মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট 
 
চাকুরীর পিছনে না ছুটে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফল বিক্রি করে। লালমনিরহাটের মোখলেজের ভাগ্যের পরিবর্তনের -গল্প।জানা গেছে, 
শূন্য থেকে শুরু করে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক বেকার তরুণ আজ উদ্যোক্তা হয়ে নিজেদের পরিবারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। তাদেরই একজন লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের আফরুক গ্রামের মোখলেছুর রহমান মোখলেজ (৩৬)। তিনি মৃত একরামুল হকের ছেলে। ১ ভাই ১ বোনের মধ্যে মোখলেজ বড়। মৌসুমি টাটকা ফল বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবলম্বী।বর্তমানে দোকান পরিচালনার খরচ বাদ দিয়ে মোখলেজের বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি। তাঁর দোকানে আরও ৫জন স্থানীয় বেকার যুবক কাজ করছেন। মোখলেজের বাবা ছিলেন একজন নিম্নবিত্ত কৃষক এবং মা মোখলেজা বেগম (৫০) একজন গৃহিণী।
 
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তিনি নবম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁদে তুলে নেন।
 
মোখলেজ জানান“শুরুর দিকে অন্যের দোকানে কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতাম। সেই আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। পরিবারের কাউকে ঠিকভাবে খাওয়াতে বা পড়াতে পারতাম না।”
 
তিনি আরও জানান, সততা বজায় রেখে সফল হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়ার ভাবনা তাঁকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াতো। ২০১৭ সালে বাবার একটি ছোট জমি বন্ধক রেখে লালমনিরহাট সদর উপজেলার  বড়বাড়ী বাজারে একটি দোকানের জামানত দেন তিনি। পরে পরিচিত এক ভাই বেলায়েত হোসেনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে।
 
স্মৃতিচারণা করে মোখলেজ জানান, পরিশ্রম, ধৈর্য আর একাগ্রতার কারণেই আজকের ওই অবস্থানে এসেছি। আমার উপার্জনের টাকায় ছোট বোনের বিয়েতে বাবাকে সাহায্য করেছি। সুপারি বাগান ও ফসলি জমি বন্ধক নিয়ে চাষ করছি। গৃহপালিত পশুও রয়েছে। কিছু নগদ অর্থও সঞ্চয় করেছি।
 
মোখলেজের পরিবারে বর্তমানে ৪জন সদস্য। স্ত্রী আরজিনা বেগম (২৯) একজন গৃহিণী, যিনি ঘর সামলানোর পাশাপাশি ছেলে মুস্তাকিম আহমেদ মিশুকে শিক্ষকসুলভভাবে পড়ান।৮বছর বয়সী মিশু বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে এবং তার ফলাফল চমৎকার।
 
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মোখলেজ  জানান, “যত কষ্টই হোক, আমার ছেলেকে ডাক্তার বানাবো। ছোটবেলা থেকেই ওই ইচ্ছা আমার। আমি না পারলেও, ছেলেকে ডাক্তার বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাব।
 
ফলের ব্যবসা নিয়েও তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান ,সরকার যদি পৃষ্ঠপোষকতা  করে। তাহলে আমি ব্যবসা আরও বড় করতে চাই। দোকানের পাশে অব্যবহৃত জায়গায় পাইকারী ফলের ব্যবসা শুরু করতে চাই। এতে স্থানীয় অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
 
মোখলেজের দোকানে আসা স্থানীয় ২ বাসিন্দা জানান, “ছোট হলেও তাঁর দোকানে দেশি-বিদেশি সব মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। আমরা সবসময় এখান থেকেই ফল কিনি—আপেল, কমলা, কলা, আঙুর, বেদানা, পেঁপে, তরমুজসহ সবকিছুই মেলে।”
 
বড়বাড়ী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোফিকুল ইসলাম তপু জানান,মোখলেজ একজন পরিশ্রমী ও সৎ ব্যবসায়ী। বাজারের অধিকাংশ ক্রেতাই তাঁর দোকান থেকে ফল ক্রয় করেন।  কারণ এখানে সবসময় টাটকা ফল পাওয়া যায়।
 
লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান জানান,  “মোখলেজের সফলতার গল্প অনুপ্রেরণাদায়ক। যদি তিনি আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করেন।  আমরা তদন্ত করে সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করবো। 
 
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক  এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “বর্তমান সরকার তরুণ উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা যদি তাদের পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে।  তাহলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
 
তরুণদের উদ্দেশে মোখলেজের পরামর্শ, চাকুরীর পেছনে না ঘুরে অল্প পুঁজি দিয়ে ফলের ব্যবসা শুরু করেও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আমাদের দেশে সারা বছরই ফলের চাহিদা থাকে। মাত্র ৪০-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেও প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করা যায়। প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কারো সঙ্গে থেকে শেখা গেলেই ব্যবসা চালানো সম্ভব।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন