
গরু রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দাবি ১৯ লাখ টাকা চোরাচালানের জব্দকৃত ৭৬ গরু জিম্মায় নিয়ে বদলে ফেলার অভিযোগ বিএনপি আ,লীগ নেতাসহ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে
হাবিব সরোয়ার আজাদ,সিলেট
বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ বিজিবির টাস্কফোর্সের অভিযানে জব্দকৃত ৮০ লাখ টাকার ভারতীয় চোরাচালানের গরু আদালতের মাধ্যমে জিম্মায় নিয়ে ছোট ছোট গরু কিনে জব্দবৃত বড় বড় গরুগুলো বদলে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিএনপি আ,লীগ নেতা ও এক স্কুল শিক্ষক বিরুদ্ধে।
আদালত এমনকান্ডে বিব্রতবোধ করায় গরুর নিলাম স্থগিত করেছেন মঙ্গলবার।
প্রসঙ্গত, গেল ৩০ এপ্রিল ভারত থেকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বোগলাবাজার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা ষ্টিল বডি ট্রলার বোঝাই ৯০টি গরু (গবাদিপশু) সুরমা নদীর নৌ পথে জব্দ করে ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদরের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাস্কফোর্স।
এরপর জব্দ তালিকায় ওই ৯০ গরুর মুল্য ৮০ লাখ টাকা নির্ধারন করে সুনামগঞ্জ মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা গরু চোরাকারবারিদের নামে মামলা দায়ের করা হয়।
কৌশলে দোয়ারাবাজারের বোগলাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, মিতালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সবির আহম্মেদ, বোগলাবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম নান্টুর ছেলে নাজমুল হাসান, যুবদল নেতা হারুনুর রশীদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বাহার উদ্দিন জব্দকৃত ৯০ গরু আদালত থেকে নিজেদের জিম্মায় নেন।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবুল কালাম জানান, মামলার পর পুলিশ-বিজিবির তদন্তকারি দল প্রথমবার-দ্বিতীয়বার সরজমিনে গিয়ে জিম্মাদারগণের হেফাজতে থাকা ৯০ গরুর অধিকাংশই গরুর সন্ধান পাইনি। এরপর তৃতীয় দফা তদন্তে গেলে জব্দকৃত তালিকায় থাকা সেই ৯০ গরুর মধ্যে ১৪ গরুর সন্ধান পাই এবং অবশিষ্ট ৭৬টি গরু বদল করে ছোট ছোট গরু দেখিয়ে দেন চতুর জিম্মাদারগণ। এরপর বিজিবি ও পুলিশ আদালতে সরজমিনে প্রাপ্ত ১৪ গরু ও বদলে ফেলা ৭৬ গরুর প্রতিবেদন জমা দেন ।
৮০ লাখ টাকার জব্দকৃত গরুর ৭৬ গরু বদলে চড়া দামে অন্যত্র গরুগুলো বিক্রি করে দেয়ার অভিযাগ উঠে গুণধর জিম্মাদারগণের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৬ আগষ্ট) আদালতের নির্দেশে জিম্মাদারগণ ৯০ গরু নিলামের জন্য নিয়ে আসার পর নিলামে অংশগ্রহকারিরা দাবি করেন বদলকৃত ৭৬ গরু সহ ৯০ গরুর বর্তমান বাজার মুল্য রয়েছে মাত্র ২০ লাখ টাকা। একম অপকর্ম আদালতে জালিয়াতির মাধ্যমে জায়েজ করতে ফের জিম্মাদারগণ ২০ লাখ টাকার গরু রক্ষণাবেক্ষণে খরচ ১৯ লাখ টাকা প্রাপ্তির দাবি উপস্থাপন করেন আদালতে।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধায় আদালতের তত্বাবধানে নিলামের পুর্বে জব্দতালিকায় থাকা চোরাচালানের গরুর ছবি, ভিডিও, আকৃতির সাথে আদালতে নিলামের জন্য নিয়ে আসা গরুগুলোর আকার , আকৃতি ছোট হওয়ায় নিলাম কমিটির আহ্বায়ক সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজি্েট্রট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুহা. হেলাল উদ্দিন নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করেন।
একপর্যায়ে আদালত জব্দকৃত ৯০ গরু পুর্ব জিম্মায় দেয়া হয়েছিলো সেই একই আকৃতির গরুগুলো আদালতে ফেরত দেবার নির্দেশ দেন। আদালতের সাথে প্রতারণা ও চতুরতার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে সেই পাঁচ জিম্মাদারগণ বেকায়দায় পড়েন।
বুধবার দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা বশির, আহসান, উজ্জল সহ একাধিক লোকজন জানান, মূলত জিম্মাদার পাঁচ জনই গোপনে গোপনে ভারতীয় গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত। আদালত থেকে ৯০ গরু জিম্মায় নেয়ার পর বোগলার কামাল খান, রফিক খান, শহিদ মিয়ার খামারে কয়েকদিন গরুগুলো রাখার পর জিম্মার ৯০ গরুর ৭৬টি দেশের বিভিণœ স্থানে বিক্রি করে দিয়ে ওই পূজি দিয়ে তারা চোরাকারবাদিরে মাধ্যমে কয়েকদিন পর পর ভারত থেকে গরুর চালান নিয়ে এসে বিক্রয় করে লভ্যাংশ নিতেন।
তারা আরো বলেন, আদালতের নিলাম জিম্মাদারের মনোনীত লোকজন পাবেন এ ভরসাতেই কমদামে ছোট আকৃতির ৭৬ গরু কিনে আদালতে উপস্থাপন করতে গিয়ে ধরা খেলেন গুণধর পাঁচ জিম্মাদার।
বুধবার গরুর জিম্মাদারগণের মধ্যে দোয়ারবাজার বোগলাবাজার এলাকার যুবদল নেতা হারুনুর রশীদের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই ঝামেলায় আছি, আমি পরে আপনার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে (গরু চোরাচালান, গরু জিম্মায় নেয়া, গরু বদলের) কথা বলব বলে দ্রুত মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
বুধবার গরুর অপর জিম্মাদার দোয়ারাবাজারের বোগলাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর বক্তব্য জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ভাই বড় বিপদে আছি। চার মাসে গরু গুলো না খেয়ে শুকনা হয়ে গেছে এখন আদালত এ গরু জব্দের গুরু নয় মানতেউ নারাজ। গরুর রক্ষণাবেক্ষন খরচ দাবি করলেন ১৯ লাখ টাকা তারপও গরুগুলো শুকনা হলো, জব্দের বড় বড় গরু গুলো ছোট হলো কি করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাইরে গরু গুলো তো খামারে বন্ধি অবস্থায় ছিল তাই এমন হয়েছে।
আপনাদের বাড়ি দোয়ারাবাজার সীমান্তে, সদর উপজেলায় চোরাচালানের গরুর চালান জব্দের পর আপনারা এতদূর থেকে গিয়ে আদালত থেকে গরুর চালান জিম্মায় নিলেন কোন স্বার্থে? আপনারা গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত, জিম্মায় গরু নিয়ে সেই গরুর ৭৬টি চড়াদামে বিক্রি করে কম দামে ছোট ছোট গরু কিনে আদালতে সমঝিয়ে দিতে যান নিলামের সময়? লোকজনের এমন সব অভিযোগের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, গরু গুলো বোগলাবাজার হাটের গরু ছিল, তাই আমি সহ ২৫ /২৬ জন জিম্মায় আনতে গেছি।
উপজেলার দোয়ারাবাজারের বোগলাবাজার হাটে ভারত থেকে আনা চোরাচালানের গরু তুলে বিক্রির পর হাটের রশীদ দিলেই চোরাচালানের গরু বৈধ হয়ে যায় এমন সরব অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর বলেন, না না সীমান্তে পুলিশ বিজিবি-ডিবি আছে এমনটি হবার কথা না, হলেও ভাই আমি এসব জানিনা বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি।