
ওসমানীনগরে পানিবন্দি দেড় লক্ষাধিক মানুষ
ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধি
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুত নতুন এলাকা। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে সূর্য্যরে দেখা মিললেও পানি বাড়ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে পানি কমছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে মানুষের দূর্ভোগ। উপজেলার প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা যায়, ৮টি ইউনিয়নের ২৮০টি গ্রামের প্রায় ১লক্ষ ৮৬ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, অতিবৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে ওসমানীনগরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এলাকার ঘরবাড়ি-রাস্তাাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।
জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ২ লক্ষ এর বেশি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রাকৃতিক এই দূর্যোগে দরিদ্র জনগোষ্টির জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্ধ না থাকায় অনাহার অর্ধাহারে দিনরাত কাটাচ্ছে শতশত পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্থ মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫০ টি শুকনো খাবারের প্যাকেট দেয়া হয়েছে। চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৭ মেট্রিক টন। নগদ বরাদ্দ দেয়া হেয়েছে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। যা স্থানীয় জসপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিরতরণ করা হচ্ছে। সচেতন মহল মনে করছেন এ বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।
এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দিন ব্যাপি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বন্যার্ত মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ, শুকনা খাবার ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও বিত্তশালীরাও ত্রাণ বিতরণ কওে যাচ্ছেন।
ওসমানীনগর উপজেলা পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর ডাইক পানি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় কাচা ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়তে শরু করেছে। আঞ্চলিক সড়ক গুলো পানির নিচে থাকায় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েকেটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা কবলিত হয়ে দূর্ভোগে থাকলেও তাদের ভাগ্যে জুটছেনা কোন ত্রাণ সাহায্য। ত্রাণ সাহায্য না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ রয়েছেন দরিদ্র লোকজন। জায়ফরপুর গ্রামের হান্নান মিয়া বলেন, আমরা ধনী লোক তাই কোন কিছু পাই না। বন্যা কবলিত হয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। কিন্তু আমার ভাগ্যে কোন সাহায্য জুটেনি।
উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাদিপুর ইউনিয়নের লামা তাজপুর, সুরিকোণা, ইব্রাহিমপুর, মোবারকপুর, গালিমপুর, চাতলপাড়, রহমতপুর, সৈয়দপুর, ভাগলপুর, কলারাই, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের জায়ফরপুর, সিকন্দরপুর, কিয়ামপুর, জিয়াপুর, মশাখলা, ভল্লবপুর, মুক্তারপুর ও তিলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বন্যা আক্রান্ত। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে তাজপুর ইউনিয়নের নাগেরকোনা, ষাইড় দা, রোকনপুর, হস্তিদুর। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সড়কগুলো কমর পানি হাটু পানির নিচে। সড়কগুলো রয়েছে পানির নিচে। অপর দিকে রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, এহিয়া চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়, শরৎ সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়, গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, খাদিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে বন্যা কবলিত। অন্যদিকে গো খাদ্যেও সংকটও দেখা দিয়েছে। ফলে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিকরা।
বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক হারে পানিবাহিত রোগ ও ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ভিড় জমাচ্ছেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার ময়নুল ইসলাম বলেন, ওসমানীনগরের ৮টি ইউনিয়নে ৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বক্ষনিক সেবা প্রদান করছেন বলে জানা গেছে। যাচ্ছেন।
সরেজমিনে গোয়ালাবাজার এলাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পেটের পীড়া, ডায়রীয়া, প্রচন্ড জ্বর , সর্দি, কাশিসহ চর্মরোগে ভোগছেন তারা। চিকিৎসকরা জানান, পানিবাহিত রোগ আক্রান্ত এবং ভাইরাস জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশু রোগীর সংখ্যা বেশী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বশীল সোহেল আহমদ জানান, বন্যায় কবলিত মানুষের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ যাবত ৬৭ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৬৭ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত লোক সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৬ হাজার জন।