ডার্ক মোড
Wednesday, 27 August 2025
ePaper   
Logo
এনার্জী টক-৩, চট্টগ্রাম জ্বালানী সম্প্রসারনঃ অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র ও ন্যায্য রুপান্তরে এর প্রভাব

এনার্জী টক-৩, চট্টগ্রাম জ্বালানী সম্প্রসারনঃ অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র ও ন্যায্য রুপান্তরে এর প্রভাব

 
নিজ্বস প্রতিনিধি
বাংলাদেশে সম্প্রতি বছরগুলোতে আবাসিক, বানিজ্যিক এবং শিল্পভিত্তিক ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর
জন্য বেশ জোরেসোরে জ্বালানী উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
ভৌতঅবকাঠামো উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দ্যেশ্য করে সরকার আমদানী নির্ভর কয়লা, প্রাকৃতিক তরল গ্যাস ও জীবাশ্ম জ্বালানীভিত্তিক প্রকল্পগুলোর উপর গুরুত্মারোপ করছে। জ্বালানীখাতের অপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারনে প্রায়শই জীব বৈচিত্র ধংস হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিদেশী বিনিয়োগকে
আকর্ষন করার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানী প্রকল্পগুলো স্থানীয় শিল্প যেমন খামার,মৎস্য চাষ, লবন উৎপাদন ইত্যাদীর ক্ষতি করছে। জ্বালানীখাতে সরকারের ভর্তুকী এবং অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা সরকারকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলছে। আমদানী করা জ্বালানীর উপর নির্ভরতার ফলে বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে ও দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানী নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে। উন্নয়নকে পরিবেশগত ন্যায্যতা এবং অর্থনীতি ও পরিবেশের দ্বন্দ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে দ্রুত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশ-সচেতন জ্বালানি রূপান্তর এখনই জরুরি। এই রূপান্তরের কেন্দ্রে থাকতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানী, বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের
সক্রিয় অংশগ্রহণ। দ্রুত জ্বালানি রূপান্তরের জন্য যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরদার করতে ও সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে আজ ২৬ আগস্ট ২০২৫, বিকেল ৩:০০টায় চট্রগ্রামে্র দামপাড়া ওয়াসার মোড়ে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা),প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, থ্রিফিফটিডটওআরজি ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে “জ্বালানি সম্প্রসারণ: বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও ন্যায্য রূপান্তরে এর প্রভাব” শীর্ষক ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল ক্লাইমেট অ্যাকশন এন্ড ইয়ুথ এম্পাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন, কসমিক স্পোর্টস এন্ড হেলথ, গ্রীন লীড, গ্লোবাল ইয়ুথ প্লাটফর্ম,  মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, নওজুয়ান, প্রাণপ্রকৃতি, উশার আলো যুব সংঘ,ইয়ুথ চেঞ্জ সোসাইটি বাংলাদেশ, ইয়ুথ ইনোভেশন ফর অ্যাকশন, ও ইয়ুথ ভয়েস ফর চেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সন্মানিত রেজিস্ট্রার জনাব মোহাম্মদ ইফতেখার মনির । মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল ও ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি এর কৌশলগত উপদেষ্টা হারজিত সিং। অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন ও সূচনা বক্তব্য দেন থ্রিফিফটিডটওআরজি এর দক্ষিণ এশিয়া সমন্বয়কারী আমানুল্লাহ পরাগ। এতে অংশগ্রহণ করেন তরুণ জলবায়ু নেতা ও কর্মী, শিক্ষার্থী, গবেষক, বিশেষজ্ঞ, সিভিল সোসাইটি সংগঠন এর কর্মীরা।

প্রধান অতিথি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার জনাব মোহাম্মদ ইফতেখার মনির তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে। জ্বালানী ও পরিবেশের এই আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে জানানো এবং আলোচনা করার জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান সময়োপযোগী। বাংলাদেশ সরকারের বিশাল বাজেটের একটি বড় অংশ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য, আর তার মধ্যে জ্বালানী উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু জ্বালানী খাত এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আমরা জ্বালানী বলতে সাধারনভাবে তেলভিত্তিক জ্বালানীকে বুঝি। গ্রীন হাউস গ্যাস এর কারনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর জন্য আমাদেরকে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর উপর নির্ভর করতে হবে। তিনি আশা করেন এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে কিভাবে টেকসই করা যায় তা জানতে পারবে। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, জ্বালানী খাতে বিনিয়োগের প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অদূরদর্শী জ্বালানী সম্প্রসারণ পরিকল্পনা আমাদের অর্থনৈতিক চাপ বাড়ায়। তাই জ্বালানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য উৎসের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের মোট জ্বালানীর ৪০ শতাংশ আমদানী নির্ভর। আবার আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশী আমদানী নির্ভর। আমাদের জ্বালানী ব্যবহারে পুরোপুরি দক্ষতা নেই। আমাদের গ্যাস সম্পদের বিকল্প না থাকায় আমাদেরকে আমদানী করতে হয়। আমরা মোট যতটুকু বিদ্যুৎ জ্বালানী ব্যবহার করি, তার মাত্র ২ শতাংশ নবায়নযোগ্য। জ্বালানী ক্ষেত্রে একটি দেশের অবস্থান নির্নয়ে তিনটি প্যারামিটার দেখা হয় যেগুলো হচ্ছে- জ্বালানী নিরাপত্তা, জ্বালানী সমতা ও জ্বালানী স্থায়ীত্বশীলতা। এগুলোর বিবেচনায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৮৩ তম,
যা গত ২ বছর আগে ছিল ৭৭ তম। আমাদেরকে জ্বালানী ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন বিগত সরকার ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা করে, কিন্তু আমাদের আন্দোলনের ফলে মাত্র ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। আমরা জানার চেস্টা করেছি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই এর কারনে আমাদের পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা দেখেছি দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে গ্রামে ফসলী ক্ষেতে এখন ফসল হয়না, নদীর পানিতে কেমিক্যাল এর কারনে মাছের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উন্নয়ন কখনোই পরিবেশকে ক্ষতি করে হতে পারে না। সরকার কখনোই পরিবেশ সমীক্ষা করতে চায়না। দাতা সংস্থার চাপে সরকার সমীক্ষা করলেও তার গ্রহনযোগ্যতা নাই, কারন সেখানে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। যুব সমাজকে নিজের দেশের জীববৈচিত্র সম্পর্কে জানতে হবে, শুধু পরিবেশ এর জন্য কাজ করার ইচ্ছা থাকলেই হবেনা , ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি এর কৌশলগত উপদেষ্টা হারজিত সিং বলেন আমরা আন্তর্জাতিক নেতিবাচক রাজনীতির কারনে জ্বালানী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সম্পদের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা সবচেয়ে বড় জীবাশ্ম জ্বালানী উৎপাদনকারী দেশ। গত এক দশকে অনেক বিনিয়োগ হলেও জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যাবহার এর অবস্থার উন্নতি হয়নি। জ্বালানী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় খনিজ সম্পদের জন্য আমাদেরকে গুটি কয়েক দেশের উপর নির্ভর করতে হয় যেমন চায়না। এক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাই আমদানী নির্ভর খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা না কমলে জ্বালানী
উৎপাদনে অগ্রগতি দুরুহ। আমরা নিজেদের প্রচেষ্টায় এর সমাধান করতে পারিনা। তাই আমাদেরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলতে হয়। শুন্য কার্বন নিঃসরন করার জন্য ২০৫০ কে টার্গেট করা হলেও উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তা অর্জন খুবই কষ্টকর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকলের সহযোগিতা দরকার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জীবাশ্ম জালানী উৎপাদনের ঝুকি নিয়ে গত এক দশকে এখনো কোন চুক্তি হয়নি। ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ এ এখন পর্যন্ত ১৭ টি দেশ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে না থাকলেও বাংলাদেশ ভুমিকাও গুরুত্মপুর্ণ হতে পারে। কারন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলার দরকার। অনুষ্ঠান সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এস. এম.
নছরুল কদির। তিনি তার বক্তব্যে বলেন তিনি সবসময়ই এধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনকে সহায়তা করতে
চান। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।  প্রতিটি আলোচনার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে একটি কুইজ প্রতিযোগিতায়
নিবন্ধিত ১৩০ জন তরুণ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরন
করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ধরা-চট্টগ্রাম এর সদস্য সচীব নিজামুদ্দিন সারুদ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন
করেন।

 

 

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন