ডার্ক মোড
Sunday, 13 July 2025
ePaper   
Logo
উল্লাপাড়া কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিডেটের জায়গা সংরক্ষণ না করে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ

উল্লাপাড়া কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিডেটের জায়গা সংরক্ষণ না করে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

দখলকৃত জায়গা উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহনের পরিবর্তে আইন ভঙ্গ করে দখলকারীর নিকট সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেড এর বিরুদ্ধে। উল্লাপাড়ার এই সমবায় সমিতিটি ১৯১৮ সালে স্থাপিত। ১০৬ বছরের পুরানো একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। সমিতি মূল ভবনের পিছনে (পশ্চিমপাশে) একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটিতে গত ১০৬ বছর থরে মাছ চাষ হয়।

এতে সমিতি বছরে প্রায় ২ লাখ আয় করে থাকে। সমিতির পশ্চিম পাশে মহাসড়ক সংলগ্ন একটি সমবায় মার্কেট রয়েছে। সেখানে ২০টি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। সমিতির মূল ভবনের সামনে ও দক্ষিণপাশে মোট ১৮ টি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। সমিতির মূল ভবন কোকোকলা কোম্পানীকে এবং দোতলায় একটি বাড়ী ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দোকান ও বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। সমিতি ভবনে উপজেলা সমবায় অফিস ও সমবায় সমিতির একটি অফিস রয়েছে।

২০০৮ সালের হামিদা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজের (বর্তমান নাম- এইচ. টি. ইমাম স্কুল এন্ড কলেজ) সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম বাচ্চু উক্ত সমিতির নিজস্ব ৫ শতক জমি জোড়পূর্বক দখল করে মাটি ভরাটের চেষ্টা করলে সমিতির তৎকালিন সভাপতি আব্দুল আজিজ তাদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যা এখন পর্যন্ত চলমাল রয়েছে। সমিতির উত্তর পাশে এইচ. টি. ইমাম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানটি সমিতির জায়গা নানা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল দীর্ঘ দিন থেকে। অবশেষে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় উল্লাপাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ মারুফ হোসেন জায়গা বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করে। এই কাজে তার অফিস সহকারী জামিল হোসেন জড়িত হয়। সমবায় সমিতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। সমিতির জায়গা বিক্রি করতে হলে সমিতি সকল আওতাধীন সমিতির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা করতে হয়। কিন্তু কোন সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় নাই।

অভিযোগ রয়েছে ২০২৩ সালে মরহুম এইচ. টি. ইমামের সন্তান সাবেক এমপি তানভীর ইমাম সমিতির সদস্যদের তার উপজেলা ক্যাম্পাসের অফিসে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সমিতির জায়গা বিক্রি করতে চাপ দেয়। এসময় এমপির নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনকৃত তারা বাবার নামকরণকৃত এইচ.টি.ইমাম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম সমিতির কিছু সংখ্যক সদস্যদের মোট অংকের টাকা প্রদান করেন। সেই সকল সদস্য সমিতির জায়গা বিক্রি করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম এই টাকা প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

উপজেলা সমবায় অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এইচ.টি. ইমাম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সিরাজুল ইসলাম গত ২০/০৮/২০২৩ তারিখে অকা/২০২৩-১৪৩৮ স্মারকে সমিতির সভাপতি বরাবর ২০ শতক জমি ক্রয়ের আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সমবায় সমিতির জমি বিক্রয় করার পক্ষে নানা ধরণের মিথ্যা বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ মারুফ হোসেন তার বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি করেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিবেদন উল্লেখ করেন। সমিতির পাশে প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠান জোড় পূর্বক সমিতির ৫ শতক জমি (পুকুরের অংশ) দখল করে রেখেছে।

উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট যদি তাদের আবেদন মোতাবেক ২০ শতক জায়গা বিক্রি না করা হয়, তবে তারা ওই ২০ শতক সহ আরো জায়গা দখল করে নিবে। যা সমিতির পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এই ধরণের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক মোঃ মোখলেছুর রহমান গত ২৬/১০/২০২৩ তারিখে নিবন্ধক ও মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিবন্ধক ও মহাপরিচালকের দপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর বরাবর বাংলাদেশ গেজেটে সমবায় আইনের ৩৫ ধারা ভঙ্গ করে সমিতির ঝিকিড়া মৌজার ১০১৬ দাগে ১৭(আএস) খতিয়ানে ৬২.৫০ থেকে উত্তর পাশে ২০ শতক জমি বিক্রির পক্ষে মতামত পেশ করে চিঠি দেন। এই জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর পর কয়েক ধাপ পেরিয়ে ১৪/০১/২০২৪ তারিখে মোঃ মাহবুব আলম উপসচিব উল্লাপাড়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিঃ এর জমি বিক্রয় করার অনুমতি প্রদান করেন।

উল্লাপাড়া সমবায় সমিতি সভাপতি হাবিবুর রহমান বাশি জানান, তিনি গত ফ্রেরুয়ারী মাসে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। সমিতির জায়গা তিনি বিক্রি করা যায় কিনা তা তিনি জানেন না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই তিনি নামমাত্র মূল্যে (৬০ লাখ টাকা) বিক্রয় দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।

এদিকে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মারুফ হোসেন ও অফিস সহকারী জামিল হোসেনকে উক্ত অপকর্মের জন্য জাতীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলামের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক অন্য উপজেলায় বদলী করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, সমিতির জায়গার দোকান ভাড়া নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন, তারা একই কৌশলে সমিতির জায়গা জমি পুকুর দখল করে নামমাত্র মূল্যে কিনে নেওয়ার পায়তারা করছেন। এলাকাবাসি শতবর্ষের এই পুরাতন সংগঠনটির জায়গা বিক্রি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছেন। কতদিন নাগাদ এই কুচক্রি মহলের হাত থেকে সমিতির জায়গা রক্ষা করে সমিতির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে কিনা ? তা দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকার জনগণ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন