ডার্ক মোড
Friday, 20 June 2025
ePaper   
Logo
ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা

ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা

ওয়ার্ল্ড ডেস্ক 

ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘাতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই ধারাবাহিতকতায় এবার ইরানের আরাকে অবস্থিত ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে এমন প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে সক্ষম একটি হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের চারপাশের এলাকা খালি করতে জনগণকে সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসেরায়েলি সেনাবাহিনী।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েল।

ওই পোস্টে নির্ধারিত এলাকাকে উপগ্রহের চিত্রে লাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া দেওয়া হয়েছে। আগের হামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবেই সতর্কবার্তা দিয়েছে তেল আবিব।

হেভি ওয়াটারের (Heavy Water) রাসায়নিক নাম ডিউটেরিয়াম অক্সাইড (D₂O)। সাধারণ পানিতে (H₂O) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রোটিয়াম নামে পরিচিত, যা হাইড্রোজেনের সবচেয়ে হালকা আইসোটোপ। অন্যদিকে, ভারী পানিতে এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর বদলে থাকে ডিউটেরিয়াম, যা হাইড্রোজেনের একটি ভারী আইসোটোপ। ডিউটেরিয়ামের পরমাণু ভর সাধারণ হাইড্রোজেনের চেয়ে দ্বিগুণ। এজন্য D₂O দেখতে পানির মতো হলেও এর ঘনত্ব, গলনাঙ্ক ইত্যাদি আলাদা। ভারী পানি পরমাণু চুল্লিতে নিউট্রন মডারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে সপ্তম দিনে গড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। চলমান এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।

তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।

এদিকে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি কিছুটা হ্রাস পাওয়ার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের জনগণের ওপর দেওয়া কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে তেল আবিব। এ ছাড়া, বৃহস্পতিবার তেহরানসহ ইরানের অন্যান্য এলাকায় বিমান হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। 

তবে এরই মধ্যে ইসরায়েলের হামলা ইরানের নাতানজে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, তেহরান ঘিরে সেন্ট্রিফিউজ কারখানা ও ইসফাহানের একটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। 

ওয়াশিংটনভিত্তিক এক ইরানি মানবাধিকার গোষ্ঠীর তথ্যমতে, ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।

জবাবে ইরান প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে। যার ফলে সেখানে অন্তত ২৪ জন নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলের আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তেল আবিবের।

ভারী পানির চুল্লিতে হামলার প্রস্তুতি কেন?

আরাক ভারী পানির চুল্লিটি তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দূরে অবস্থিত। ভারী পানি পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা করতে সহায়তা করে, তবে এটি একটি উপজাত হিসেবে প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করে, যা পরবর্তীতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। 

এর অর্থ, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হয়, তাহলে এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বাইরে আরেকটি বোমা তৈরির পথ হতে পারে। এর আগে, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় ইরান এই স্থাপনাটির নকশা পরিবর্তনে সম্মত হয়, যাতে এটি পারমাণবিক বিস্তার সংক্রান্ত উদ্বেগ হ্রাস করে।

তবে ২০১৯ সালে সেই চুক্তি লঙ্ঘন নার করেই ইরান এই হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের সেকেন্ডারি সার্কিট চালু করে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বের করে নেন ট্রাম্প। ব্রিটেন তখন রিঅ্যাক্টরটির নকশা পরিবর্তনে ইরানকে সহায়তা করে। 

এদিকে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে। সংস্থাটির পরিদর্শকরা সর্বশেষ গত ১৪ মে আরাক পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে।

তবে ইরানের ওপর নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় ভারী পানি উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি আইএইএ। ২০১৫ সালের চুক্তির আলোচনার অংশ হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে ভারী পানি বিক্রির শর্তে রাজি হয়েছিল ইরান। 

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও একপর্যায়ে প্রায় ৮০ লাখ ডলারে ৩২ টন হেভি ওয়াটার কিনেছিল। সে সময় এ বিষয়টি চুক্তির সমালোচকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন