ইভিএম সংরক্ষণে ওয়্যারহাউস নির্মাণ, প্রতিবেদনের অপেক্ষায় ইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যেন গলায় আটকে আছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় এখনও ইভিএম সংরক্ষণে কোনো ওয়্যারহাউজ নির্মাণ বা ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি ইসি। যার ফলে মাঠ পর্যায়ে সংরক্ষিত ইভিএমগুলো নষ্ট হওয়া উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত আছে এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের নীচ তলায় স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থায় আছে। এতে ইভিএমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানেও অসুবিধা হচ্ছে। এই অবস্থায় ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়ারহাউজ তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন সাবেক সচিবরা।
সম্প্রতি ইসির সমন্বয় সভায় জানানো হয়, ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের খাস জমির পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য সংস্থার জমিও দেখে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান আছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রমের পাশাপাশি বিদ্যমান ভবনগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন চলতি মাসের মধ্যে কমিশনের নির্ধারিত শাখায় দিতে হবে।
জানা গেছে, ১/১১ সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন।
পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়। ২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেন তারা।
এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। সেই প্রকল্প থেকে দেড় লাখ ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানের ইভিএম মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে।