ডার্ক মোড
Saturday, 26 July 2025
ePaper   
Logo
আল জাজিরার বিশ্লেষণ ইসরায়েল কি ইরানে ফের হামলার পরিকল্পনা করছে

আল জাজিরার বিশ্লেষণ ইসরায়েল কি ইরানে ফের হামলার পরিকল্পনা করছে

  বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক 

 
 

গত মাসে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, তারা বেশ কয়েকজন ইরানি সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করতে পেরেছে।

 
এর সঙ্গে ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দুর্বল করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য রাজি করাতে পেরেছে।

 

তবে এই বিজয়ের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে তারা আবার হামলা চালাতে তারা প্রস্তুত।

 
 
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার সরে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই।

 

বিশ্লেষকদের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েল এখন নতুন করে ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থা পতনের লক্ষ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর সুযোগ খুঁজছে।

 
তবে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির দরকার হবে, যা পেতে তারা বাধার মুখে পড়তে পারে।

 

গত জুনের মাঝামাঝি ইসরায়েলের আকস্মিক হামলায় যুদ্ধ শুরু হয়।

 
ওই সংঘাতে এক হাজারের বেশি ইরানি এবং ২৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। ইসরায়েল ইরানে হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক’ এবং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের জন্য প্রয়োজনীয় বলে দাবি করে।

 

যদিও ইরান দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালনা করা হয়।

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানান, বর্তমান যুদ্ধবিরতি কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তিনি বলেন, আমরা ইসরায়েলের নতুন যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ মোকাবিলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম।

যুদ্ধের কারণ

ইসরায়েল মূলত ইরানের উচ্চপদস্থ সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা ইরানি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল বা ধ্বংস করে দেওয়ার প্রয়াসেরই ইঙ্গিত দেয়।

ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোয়িন্সি ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ত্রিতা পার্সি মনে করেন, নেতানিয়াহু ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান, যেখানে ইসরায়েল যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে।

তার মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি ইরানের ওপর পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে ইসরায়েল তার আগের সংঘাতের রাজনৈতিক সুযোগ পেয়ে যাবে।

জুলাইয়ের শুরুর দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছেন, আগস্টের মধ্যে নতুন কোনো পারমাণবিক চুক্তি না হলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা হবে।

এ অবস্থায় ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে যেতে পারে, যা ইসরায়েলকে আবার হামলার সুযোগ দেবে বলে মনে করেন পার্সি।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি জরুরি

ইসরায়েলের রাইখমান ইউনিভার্সিটির ইরান-বিষয়ক অধ্যাপক মেইর জাভেদানফর বলেছেন, নতুন করে হামলা চালাতে ইসরায়েলকে অবশ্যই প্রমাণ দিতে হবে যে, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নতুন করে চালু করেছে।

তার মতে, এমন হামলা চালাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমতি নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইসরায়েলের সিরিয়া আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে তা সহজে সম্ভব হবে না।

গোপন হামলা চলছে?

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইরানে গোপন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে হঠাৎ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বিভিন্ন জায়গায়। তেল শোধনাগার, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, বিমানবন্দর ও এমনকি এক জুতার কারখানায় এসব ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির (সিআইপি) ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নেগার মরতাজাভি বলেন, নেতানিয়াহু এমন একটি ফর্মুলা বের করেছেন যার মাধ্যমে তিনি ট্রাম্পের আপত্তি সত্ত্বেও ইরানকে হামলা করতে পারছেন।

বিশ্লেষক ও ইরান বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ মনে করেন, ইরানে ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্ক এখনও সক্রিয়। তিনি বলেন, এই নেটওয়ার্ক মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হয়, যেমন আগুন লাগানো বা বিস্ফোরণ ঘটানোর মতো কাজে, যেন ইরান বুঝতে পারে, তারা এখনো সেখানে রয়েছে।

নতুন যুদ্ধের শঙ্কা কতটুকু?

নেতানিয়াহুকে আগে কেউ আগ্রাসী বলে ভাবত না। কিন্তু এখন তিনি সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরান এমনকি গাজায়ও বিনা দ্বিধায় আক্রমণ চালাচ্ছেন।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের ভেতরের বিভক্তি ভুলিয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরির উপায় হতে পারে নেতানিয়াহুর জন্য।

গোল্ডবার্গ বলেন, গাজা নিয়ে ইসরায়েলিরা বিভক্ত, কিন্তু ইরান নিয়ে নয়। নেতানিয়াহু যদি নিজের অবস্থান দুর্বল মনে করেন, তাহলে তিনি ইরানে হামলা চালিয়ে দেশবাসীকে এক করতে চাইবেন।

তবে ইরানও এবার প্রস্তুত বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। মরতাজাভির মতে, তেহরান এখনো কূটনৈতিকভাবে একটি পারমাণবিক চুক্তির আশা করলেও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকবে বলে ধরেই নিয়েছে। তারা জানে যে, চুক্তি হলে ইসরায়েলি হামলার শঙ্কা অনেক কমে যাবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন