
আগামীকাল বিকাল ৩টায় বাজেট ঘোষণা করা হবে
স্টাফ রিপোর্টার
সোমবার জাতির সামনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে যে, পূর্ব-রেকর্ডকৃত বাজেট ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত বিকাল ৪টার পরিবর্তে বিকাল ৩টায় সম্প্রচারিত হবে।
এছাড়াও, জাতীয় বাজেটের ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করার জন্য সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনগুলোকে বিটিভি থেকে ফিড গ্রহণ করে বাজেট ভাষণটি একই সময়ে সম্প্রচার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমবারের মতো বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও প্রকৃত আয় কমার উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও মূল করনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য বার্ষিক আয়করমুক্ত থাকার সীমা গেল বছরের মতো ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে এ সীমা বাড়ানোর দাবি থাকলেও তা বিবেচনা করা হয়নি।
তবে, ব্যবসায় কর কিছুটা বাড়বে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়; এমন কোম্পানিগুলোর করহার ২.৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে। বার্ষিক ৩০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন থাকা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ট্যাক্স (কর) ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ক্ষেত্রে, কর ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য বর্তমান ২০ শতাংশ কর অপরিবর্তিত থাকবে।
কিছু লক্ষ্যভিত্তিক কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে—নতুন করদাতাদের উৎসাহ দিতে ন্যূনতম কর ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে।
জমি কেনাবেচায় কর কমিয়ে ঢাকায় ৬ শতাংশ, বিভাগীয় শহরে ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে, যা বর্তমানে যথাক্রমে ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ।
আয়কর রিটার্ন দাখিলে বাধ্যবাধকতা শিথিল হতে পারে। বর্তমানে ৪৫টি সেবায় রিটার্নের প্রমাণপত্র লাগে—এ সংখ্যা কমানো হতে পারে। সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে রিটার্ন লাগবে না, তবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক থাকবে।
আত্মীয়দের উপহার হিসেবে অর্থ দিলে করমুক্তির সুযোগ স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানের পাশাপাশি ভাই-বোনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। বেসরকারি খাতের কর্মীদের করমুক্ত ভাতা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হতে পারে।
নিয়োগকারীরা এখন তাদের কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক সুবিধা (যেমন: গাড়ি, বাড়িভাড়া, বোনাস ইত্যাদি) বাবদ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় বাড়তি কোনো হিসাব বা জটিলতা ছাড়াই করপত্রে দেখাতে পারবেন। আগে এই সীমা ছিল ১০ লাখ টাকা।
এছাড়া, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এবং সার্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে আসা আয় করমুক্ত থাকবে।
জমি ও ফ্ল্যাট কেনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত থাকতে পারে, তবে এলাকাভেদে বেশি হারে কর দিতে হতে পারে। অর্থের উৎস ঘোষণার বিধানও থাকতে পারে। বিদেশে পাচার করা অর্থ ও সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপের ঘোষণা আসতে পারে, বিশেষ করে যারা নাগরিকত্ব ত্যাগ করেও দেশ থেকে আয় করছেন।
ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার নিচে কোনো আবগারি কর (এক্সসাইজ ডিউটি) না থাকলেও, এই সীমা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে।
মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বৃদ্ধির কারণে ফ্রিজ, এসি ও মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। তবে আমদানি শুল্ক হ্রাসের কারণে বাস, মাইক্রোবাস, চিনি, মাখন, সফট ড্রিংকস, বিশেষ ধরনের কাগজ ও ক্রিকেট ব্যাটের দাম কমতে পারে। রড, ফেসওয়াশ, লিপস্টিক ও চকলেটের দাম বাড়তে পারে।