শেখ হাসিনা যুগের পরবর্তী ৩ মাস ‘মবের মুল্লুক’ মনে হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী তিন মাস “মবের মুল্লুক” মনে হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তাঁরা চেষ্টা করছেন সংস্কার করার। তাঁদের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সময় দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর লালমাটিয়ায় “জুলাই গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্ভূক্তি এবং ন্যায়বিচার : জনপরিসরে গণতন্ত্র” শীর্ষক সমসাময়িক বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্টের বিশেষ সেমিনারে সামিনা লুৎফা এই কথা বলেন।
সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক লুৎফা বলেন, এটা বিপ্লবী সরকার না। ছাত্র-জনতা বিপ্লব করেনি, অভ্যুত্থান করেছে। তবে জনগণের আশা আকাঙ্খার বাস্তবায়ন জরুরী। আওয়ামী লীগ সরকারের মত আচরণ করা যাবে না। বর্তমানে একজন উপদেষ্টা আগের একজন আওয়ামী মন্ত্রীর মত আচরণ করছেন। এক্ষেত্রেও সাবধান হতে হবে। সরকারের পরিষদের বেশিরভাগ এনজিও সম্পৃক্ত। এছাড়া, এখনো আর্মড ফোর্সেস মেজর প্লেয়ার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, এই সময়কালে শুধু সংখ্যালঘুরা (মাইনরিটি) ভিক্টিম হয়েছেন তা নয়, সংখ্যাগুরুও (মেজরিটি) ভিক্টিম হয়েছেন। দেশের অধিকাংশ লোক নিজেদের মজলুম বলে অনুভব করছেন। কেউ তার ধর্মের জন্য, কেউ তার বঞ্চনার জন্য, কেউ তার ন্যায় নিচার না পাওয়ার জন্য, কেউ পদোন্নতি, কেউ হিজারের জন্য, কেউ পোশাকের জন্য, কেউ সিঁদুরের জন্য ইত্যাদি।
৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত কার্যত দেশে কোন সরকার ছিল না। এই সময়ে ও তার পরবর্তী সময়ে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়না। হওয়া উচিত।
সামিনা লুৎফা আরও বলেন, বিভিন্ন মতাদর্শ ও শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে ডেমোক্রেটিক ভায়োলেন্স সংঘটিত হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের কার্যকারিতার বিষয়ে লুৎফা আলোকপাত করে বলেন, নির্দিষ্ট নেতৃত্ব না থাকাটা বা খুঁজে না পাওয়াটা, আন্দোলনকারীদের একটি কৌশল।
বিআইএসআর-এর ইন্টার্ন রাশেদ আঞ্জুম নিলয়ের করা প্রশ্ন, ‘একটি আন্দোলন আরেকটি আন্দোলনের জন্ম দেয় কিনা,’ - এর জবাবে সামিনা লুৎফা বলেন, আন্দোলন বিফল হলেই পরবর্তীতে আরও আন্দোলনের জন্ম হয়।
বিশেষ সেমিনারটির মডারেটর বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, ড. খুরশিদ আলম দাবি করেন, জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন সফলের পেছনে খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকদেরও ভূমিকা রয়েছে।
তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের প্রায় ৯৫% সাধারণ সমর্থক এই আন্দোলনে সমর্থন দেন। শুধু আওয়ামী লীগ বিরোধীরা এই আন্দোলনকে সফল করেছে তা নয়, এটি সাধারণ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অংশগ্রহণে গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। তাই বর্তমানে সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করার কোনই সুযোগ নেই।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের অধ্যাপক ড. বখতিয়ার আহমেদ বলেন, আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন সাধারণ আওয়ামী সমর্থকরাও অনলাইনে বা মাঠে নেমে একাত্মতা পোষণ করেছেন। এই আন্দোলনে বাবা ও ছেলে দুইজন দুই পক্ষে থাকতে দেখা গেছে। নীতির প্রশ্নে কতটা আপোষহীন থাকা যায়, তা দেখিয়েছে তরুন সমাজ।
তিনি সার্বিক ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ঐক্য লাগবে কেন বলা হচ্ছে? কারণ এখন ঐক্য নাই। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
অধ্যাপক বখতিয়ারের মতে, বিগত সরকারের সময় ছাত্র ও শিক্ষকদের আন্দোলনকে সম্মান দেখানো বা সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নজির নেই। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমরা বিকল্প আদর্শ হিসেবে সামাজতান্ত্রিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলাম। এখন আর কোন বিকল্প আদর্শ নেই। বর্তমান সমাজ বিকল্পহীন কল্পনার সমাজে পরিণত হয়েছে।
দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, শিক্ষক-ছাত্ররা হাইব্রিড উপায়ে এই বিশেষ সেমিনারে অংশ নেন।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?