
বিশ্বজুড়ে সেপ্টেম্বরে 'ড্র দ্য লাইন' আন্দোলন: অবিচার ও দূষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব
নিজস্ব প্রতিনিধি
এক নতুন ঐতিহাসিক পদক্ষেপের সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্ব। আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ বিশ্বজুড়ে শুরু হচ্ছে 'ড্র দ্য লাইন' (Draw the Line) নামক এক বিশাল বৈশ্বিক আন্দোলন। এই আন্দোলনে শ্রমিক, যুবক, আদিবাসী গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন একজোট হয়ে অবিচার, দূষণ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তাদের লক্ষ্য একটি ন্যায্য রূপান্তর এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, ন্যায্যতা ও শান্তির উপর ভিত্তি করে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।
আন্দোলনের মূল আয়োজকদের মধ্যে রয়েছে 350.org, CAN-International, APMDD, এবং War on Want-এর মতো আন্তর্জাতিক জলবায়ু সংস্থাগুলো, যারা স্থানীয় ও আঞ্চলিক আন্দোলনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা, বৈষম্য দূর করা এবং মানুষ ও প্রকৃতির জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলা।
জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বানের সাথে সংহতি
এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি এসেছে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এক বড় জলবায়ু ভাষণের ঠিক পরেই। গুতেরেস তার ভাষণে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা সুবিধার ওপর জোর দিয়েছেন। 'ড্র দ্য লাইন' আন্দোলন এই বৈশ্বিক আহ্বানের সাথে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ।
ব্যাপক কর্মসূচি ও বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণ
১৫ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এই আন্দোলনের মূল কার্যক্রমগুলি ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সালের সপ্তাহান্তে শীর্ষে পৌঁছাবে। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন মহাদেশ জুড়ে হাজার হাজার কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন, যার মধ্যে রয়েছে লাল ও সবুজ রেখা তৈরি, দীর্ঘ পদযাত্রা, ধর্মঘট, উৎসব, কমিউনিটি সমাবেশ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জোহানেসবার্গ, নয়াদিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, করাচি, লাহোর, নাইরোবি, ঢাকা, নিউ ইয়র্ক সিটি, লন্ডন, প্যারিস, এবং বার্লিনসহ বিশ্বের প্রধান শহরগুলিতে বড় আকারের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই ইভেন্টগুলিতে মূলত ন্যায্য রূপান্তর, গ্লোবাল সাউথের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পর্যায়ক্রমিক বিলুপ্তির দাবি জানানো হবে।
আমাদের মূল দাবি:
* শ্রমিক ও সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরের মাধ্যমে বর্তমান ব্যবস্থা পরিবর্তন।
* নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং দূষণকারীদের কার্যক্রম বন্ধ করা।
* সংকটের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
* গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।
* মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং শান্তি রক্ষা।
* পৃথিবীর সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার।
বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর:
বাংলাদেশের ওয়াটারকিপার্সের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল এই আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে ক্রমাগত বিনিয়োগ আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে, ক্ষতিকারক নির্ভরশীলতাকে জোরদার করে এবং একটি পরিচ্ছন্ন, আরও টেকসই ভবিষ্যতের পথকে বাধাগ্রস্ত করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই অবিচার এবং জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে।"
350.org-এর নির্বাহী পরিচালক অ্যান জেলেমা এই আন্দোলনকে 'জনশক্তি'র বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "যখন সরকারগুলি কাজ করতে ব্যর্থ হয়, আমরা জেগে উঠি। আমরাই এই সংকটের সমাধান জানি এবং বিশ্ব নেতাদের জনগণের ইচ্ছাকে অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।"
এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (APMDD)-এর সমন্বয়কারী লিডি ন্যাকপিল গ্লোবাল নর্থের প্রতি তাদের জলবায়ু অর্থায়নের বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণ করার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ১০০% নবায়নযোগ্য শক্তিতে দ্রুত রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
এই সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চলেছে। এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী নেতাদের জন্য COP30-এর ঠিক আগে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে, যা একটি ন্যায্য, পরিবেশবান্ধব এবং শান্তিময় বিশ্বের পথ দেখাবে।