
ফরিদপুরে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাসষ্টান্ড এলাকা রণক্ষেত্র: ১০ জন শ্রমিক
মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর
ফরিদপুরে মোটর ওয়ার্কার্স শ্রমিক ইউনিয়ন -১০৫৫ এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা ও পাল্টা হামলায় রণক্ষেত্রে রুপ নিয়েছে ফরিদপুর বাসষ্টান্ড এলাকা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয় । সাধারণ শ্রমিকদের দাবি, বৈধভাবে সকলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে জেলা শহরের গোয়ালচামটস্থ পৌর বাস টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বেলা ১১ টার দিকে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স (১০৫৫) শ্রমিক ইউনিয়ন অবৈধভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ এনে এবং কমিটি বাতিলের দাবিতে "সকল শ্রমিকের ব্যানারে" মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে অপরপক্ষের দাবিকৃত নির্বাচিত সভাপতি ইয়াছিন মোল্যার (৪০) নেতৃত্বে অর্ধশত লোক লাঠিশোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাঁদের ব্যানারও কেড়ে নেয়া হয় এবং এলোপাতাড়িভাবে শ্রমিকদের পেটানো হয়। হামলাকারীরা মানববন্ধনে থাকা শ্রমিকদের আওয়ামীলীগের দোসর আখ্যায়িত করে শ্লোগানও দিতে দেখা যায়।
এ ঘটনার পর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা এবং সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করার হুমকি দেন। তাঁরাও লাঠিশোটা নিয়ে বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন। পরে দুপুর ২ টার দিকে দুইপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে রুপ নেয়। এ সময় ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করা হয়। আহত হোন অন্ততপক্ষে ১০ জন শ্রমিক। তাঁদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে বিরোধ চলে আসছে। এক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ করেন বর্তমান সভাপতি (বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত) ইয়াসিন মোল্লা ও অপর গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন লাভলু।
সাধারণ শ্রমিক ও সংগঠনটির সাবেক একাধিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নটিতে ৭ হাজার ২'শ জন সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে এক হাজার দুইজন শ্রমিককে সদস্য দেখিয়ে একপাক্ষিকভাবে ২৫ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে কোনো প্রতিদ্বন্ধি কেউ না থাকায় গত ১৭ জুলাই সকলকে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার।
ইসমাইল হোসেন লাভলু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকদের না জানিয়ে গোপনে নির্বাচন করা হয়। কোনো তফসিল ঘোষণা না করে এবং ভোটার তালিকা না টানিয়েই অবৈধভাবে নির্বাচন দেখিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নটি দখল করা হয়। যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হলে সেখানেও ইয়াছিন মোল্যার নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের দাবি জানাই এবং শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার চাই।
অপরদিকে ইয়াছিন মোল্যা মানববন্ধনকারীদের আওয়ামীলীগের দোসর আখ্যায়িত করে বলেন, এই আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও চাঁদাবাজি করতেছে। আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এই নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করতে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আজ আওয়ামী লীগের দোসররা একত্রিত হয়েছিল, তখন আমরা সাধারণ শ্রমিকরা বাঁধা দিয়েছি।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।