
ছেলে হারানোর শোক আর পিতৃহারা দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় খালেদা
শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ রাউজান (চট্টগ্রাম)
বাড়ীর উঠানে বসে ছোট্ট অবুঝ দুই নাতি-নাতনিকে কোলে নিয়ে ছেলের জন্য মায়ের আহাজারি করছেন খালেদা বেগম। ছেলের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ পুলিশের ভ্যানে। ছেলে হারা শোক আর অবুঝ দুই নাতি-নাতনি পিতৃহীন হওয়ায় বেদনে যেন চেপে ধরেছে খালেদার বুক। এর আগে ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ঘর থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। দুই নাতি-নাতনি এখনো অবুঝ শিশু। আড়াই বছরের নাতি ও আট মাসের শিশু কন্যা নাতনিটি বাবাকে হারিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনাথ হয়ে গেলো।তাঁরা কোনোদিন বাবাকে আর বাবা বলেই ডাকতে পারবে না। নিষ্ঠুরভাবে সন্ত্রাসীরা কেড়ে নিলো তাদের বাবার প্রাণ। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে রাউজান উপজেলার ৭নং রাউজান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের গাজীপাড়ার একটি দোকানের সামনে ইব্রাহিমকে মাথা ও বুকে গুলি করে হত্যা করেন। নিহত ইব্রাহিম রাউজান সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজান গাজীপাড়া এলাকার গুচ্ছগ্রামের মোহাম্মদ আলমের ছেলে। ইব্রাহিম বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী। ইব্রাহিম যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে আহাজারি চলছে। নিহতের মা খালেদা বেগম, বাবা আলম ও স্ত্রী নুরজান বেগমসহ বোন রিপু আক্তারের কান্নাকাটিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহতের দুই অবুঝ শিশু দাদির কোলে বসে শুধু এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। কিছুতেই বুঝতে পারছে না, তাদের বাবা আর নেই। শুধু পরিবারের মানুষরাই নয় আশপাশের মানুষও কান্নাকাটি করছে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শান্তির রাউজান এখন অশান্তিতে পরিণত হয়েছে। একের পর এক খুন, গুম, গুলাগুলি, চাঁদাবাজিসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় জনসাধারণ জানান, সাধারণ মানুষ হাট বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ রাউজানে শান্তি চাই। হানাহানি মারামারি চাই নাই৷ শান্তিতে বাঁচতে চাই। এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।নিহতের মা খালেদা বেগম জানান, আমি কিস্তি দিতে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। তাকে কে বা কারা ফোন করে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি দোকানের সামনে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি ও ফাঁসি চাই।নিহতের বাবা মো. আলম বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতামি নাই। সে এলাকায় বালু, ইট ও কাঠের ব্যবসা করে।দুপুরে ফোন পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির এক কিলোমিটার দূরে একটি দোকানে বসেছিল।এসময় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি করে হত্যা করেন।আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। নিহতের স্ত্রী নুরজান বেগম বলেন, আমার স্বামী খাটে ঘুম ছিলেন। আমি তার জন্য সকাল চা- নাস্তা তৈরি করছিলাম। এমন সময় তার মোবাইলে একটা ফোন আসে। তিনি ফোন পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বাইরে চলে যায়। তাঁর হাত ধরে বলছিলাম চা খেয়ে যান। তিনি চা-নাস্তা না করে বাইরে চলে গেলে কিছুক্ষণ পর খবর পাই সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। যারা আমার স্বামীকে হত্যা করে আমার দুই অবুঝ শিশু সন্তানকে এতিম করেছে, তাদের ফাঁসি চাই। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইব্রাহীম নামের একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করি। তার মাথার পেছনে গুলি লেগে মগজ বের হয়ে গেছে। ঘটনাস্থল হতে দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।ইব্রাহিমকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারা জড়িত তা শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।