
উচ্ছেদের ৪৫ দিনের মাথায় আবারও গজিয়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা: বাগেরহাটে সড়কপথে ফের বিশৃঙ্খলা
এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির
বাগেরহাট প্রায় দেড় মাস আগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে পিরোজপুর থেকে নওয়াপাড়া বিশ্বরোডের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের সহস্রাধিক অবৈধ কাঁচা ও পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভেবেছিল, এবার বুঝি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।
গত ১৫ ও ১৬ মে এই উচ্ছেদ অভিযানের মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় সেই স্বস্তি উধাও। অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতেই উচ্ছেদকৃত স্থানের অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা আবারও নতুন করে গড়ে উঠছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজশেই এই প্রবণতা বাড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আমরা ভেবেছিলাম এবার সড়কটা এবার প্রশস্ত হবে এবং যানজট কমবে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু! উচ্ছেদ হওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই আবার দোকানপাট বসতে শুরু করেছে। রাতের আঁধারে কাজ চলে, দিনের বেলায় দেখা যায় কাঠামো উঠে গেছে।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, সওজ অভিযান চালিয়ে গেল, কিন্তু তাদের কোনো ফলোআপ নেই। একবার উচ্ছেদ করে দিলেই তো হলো না, নিয়মিত নজরদারিও দরকার। স্থানীয় কিছু নেতা আর অসাধু চক্রের যোগসাজশে এসব অবৈধ স্থাপনা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো বিপদে পড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দা ইমন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম এবার সড়কটা প্রশস্ত থাকবে, গাড়ি চলাচলে সুবিধা হবে। কিন্তু এখন আবার আগের মতোই দোকান বসছে।
শাহীন হাওলাদার বলেন, একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেবল একজন মানুষকে নয়, পুরো একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো আমাদের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে রাস্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ে, অবকাঠামোগত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পার্কিংয়ের কোনো জায়গা থাকে না, গাড়িগুলো চলাচলের সুযোগ কমে যায়, বাড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। যদি প্রশাসন কঠোরভাবে নজরদারি চালায় এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে এসব অনিয়ম ও দুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, নোয়াপাড়া থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে যতগুলো অবৈধ স্থাপনা ছিল, সেগুলো আমরা উচ্ছেদ করেছি। আবার কেউ গড়ে তুললে আমাদের মেকানিজম আছে, আমরা আবারো অভিযান চালাব। তবে আমাদের সাব-ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত মাঠে তদারকি করছেন। শুধু সওজ নয়, প্রশাসন, পুলিশ ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। একাধিকবার উচ্ছেদ করলে তারা হয়তো বারবার স্থাপনা গড়ার আগ্রহ হারাবে। তবে সবার আগে দরকার সামাজিক সচেতনতা ও নজরদারি।