ডার্ক মোড
Tuesday, 17 September 2024
ePaper   
Logo
হাত ঘুরে দুই দফায়ও বিক্রি অস্থায়ী হাটেও মাংসের কেজি ৬০০-৯০০ টাকা

হাত ঘুরে দুই দফায়ও বিক্রি অস্থায়ী হাটেও মাংসের কেজি ৬০০-৯০০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের পরপরই পশু কোরবানির পর্ব শুরু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুপুর নাগাদ শেষ হয়ে যায় গোশত কাটা আর ভাগবন্টন। এরপর চলে গরিবদের মধ্যে বিলি। বিলিয়ে দেওয়া গোশত সংগ্রহ করে কিছু অংশ নিজেদের জন্য রেখে এক শ্রেণির মানুষ বাদবাকি মাংস বিক্রি করে দেন। তাই, নগরীর নানা স্থানে কোরবানির মাংস বিক্রির অস্থায়ী হাট বসতে দেখা যায় ঈদের দিন শেষ বেলায়। এ হাটে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা দেখা যায়।

যারা কোরবানি দিতে পারেন না তারা কম দামে এই হাট থেকে মাংস কিনে নেন। ঈদের দিনে মাংস বিক্রি এবং কেনার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট বাজার বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছিন্নমূল ও দরিদ্র লোকজন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে তা ওই সব বাজারে বিক্রি করে দেন।

প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কোরবানির গোশতের অস্থায়ী হাট বসেছে। বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া মাংস নিয়ে এসব হাটে বিক্রি করছেন দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। প্রতিকেজি গোশত বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৯০০ টাকা। এমনও দেখা গেছে এই মাংস কেউ ৫ কেজি বিক্রি করলেন। তার কাছ থেকে একজন ৬০০ টাকা কেজিতে কিনে নিলেন। এভাবে তিনি আরও কয়েকজনের কাছ থেকে একই পরিমাপের মাংস কিনে নিয়ে সব মাংস এক করে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

এভাবে ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় এসব মাংস বেচাকেনা হতে দেখা গেছে। কেউ অল্প মাংস সস্তায় বিক্রি করছেন আবার কেউ আধা মণের মতো মাংস বেশি দামে বিক্রি করছেন। এই হাটে গোশত নিয়ে বসে থাকতেও দেখা গেছে বিক্রেতাদের। এসব হাটের অধিকাংশ ক্রেতাই স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে একেবারেই হতদরিদ্র ক্রেতা এ হাটে তেমন দেখা যায়নি। তারা সবাই ছিলেন বিক্রেতাদের দলে।

বিভিন্ন মাধ্যমে হিসাব করে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কোরবানির গরু কেনা-হাসিল পরিশোধ আর কসাইয়ের মজুরি দেয়ার পর কোরবানির মাংসের মূল্য দাঁড়ায় প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, কোনো কোনো গরুর ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি। কোরবানির সেই গোশতই হাত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০, ৮০০ ও ৯০০ টাকা কেজি দরে। প্রতি বছর কোরবানি শেষে দুপুরের পর থেকে বিকেলের দিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে চোখে পড়ে এসব অস্থায়ী মাংসের হাট। এবারও দেখা গেল সেরকম কিছু চিত্র। শহরের অলিতে-গলিতে অস্থায়ী এ বাজারে একটু কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও, রামপুরা ব্রিজ, নতুন বাজার, বাড্ডা লিংক রোড, নতুনবাজার, নর্দা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্পটে বসেছিল কোরবানির মাংস বিক্রির ভাসমান হাট।

রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে কয়েক ভাগ মাংস সাজিয়ে ফুটপাতে বসে আছেন মৌসুমি কসাই আনিস মিয়া। তিনি জানান, কোরাবানির মাংস কাটার পর নিজের ও তার দলের পাওয়া মাংসের অংশ একত্রিত করেই বিক্রির জন্যে বসেছেন। বাড়ি রংপুরে হওয়ায় বাড়ি পৌঁছাতে মাংস নষ্ট হয়ে যাবে, তাই এসব বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

তিনি আরও জানান, ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। কোরাবানির সময় মৌসুমি কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করেন। গত তিন-চার বছর ধরেই কোরাবানির ঈদে তিনি এ কাজ করেন।

মৌসুমী বিক্রেতাদের কাছ থেকে কোরবানির গরুর মাংস কিনে বাড্ডা লিংক রোডের মাথায় মাংস নিয়ে বসেছেন বেশ কয়েকজন। দাম চাচ্ছেন ৯০০ টাকা কেজি, তবে ৮৫০ টাকা দাম বললে বিক্রি করছেন। আনিসের সঙ্গে কথা বলার মাঝেই একজন মধ্যবয়সী নারী এসে দরদাম করে ৮০০ টাকায় ৫ কেজি মাংস নিয়ে গেলেন।

নগরীর একাধিক মাংসের হাট ঘুরে দেখা যায়, কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, বেশি দাম দিয়ে মাংস কেনারও সামর্থ্য নেই এবং কারো বাড়ি থেকে গোশত চেয়ে নিতে সংকোচ বোধ করেন-এমন লোকজনই কম দামে মাংস কেনার জন্য এসব হাটে আসছেন।

বাড্ডার একটি মোড়ে মাংস বিক্রি করছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে জানান, যারা মূলত কোরবানি দেননি তারাই কোরবানির মাংস কিনতে আসছেন। আমরা সাড়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করছি।

মাংস কিনতে আসা আলমগীর জানান, অফিসে চাপ এবং রাস্তায় গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। তাই আজকে গোশত কিনতে এসেছি। দাম সামান্য কম কিন্তু তাজা মাংস। এছাড়া গরিব মানুষ কম দামে মাংস কিনতে পেরে খুশি। অন্যদিকে সকাল থেকে ভিক্ষুক ও গরিব-অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে যে মাংস সংগ্রহ করছেন সেগুলো তারা এসব স্থানে বিক্রি করছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীও।

বসুন্ধরার রাস্তায় আনুমানিক ৫ কেজি মাংস বিক্রি করতে আসেন গাইবান্ধার সুরুজ মিয়া। তিনি জানান কয়েকটি বাসায় কোরবানির গরু ছাড়ানোর কাজ করে টাকার পাশাপাশি পাঁচ-ছয় কেজি মাংস পেয়েছেন। তার স্ত্রী বিভিন্ন বাসায় বাসায় ঘুরে পেয়েছেন আরও তিন-চার কেজি। কেজি দুই এর মতো নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করতে এসেছেন তিনি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন