ডার্ক মোড
Sunday, 23 February 2025
ePaper   
Logo
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম এর ৬ দফা দাবি

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম এর ৬ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম এর সভাপতি মোঃ আজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান তানভীর এর স্বাক্ষরিত ছয় দফা দাবি স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর ভাবে উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশের প্রায় ৩০ হাজার গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান এ কে আজাদের কাছে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম এর পক্ষ থেকে এই লিখিত সুপারিশ জমা দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবনায় বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের ছয় দফা দাবি অন্তর্ভুক্তি করণের জোর দাবি জানান।

স্বাস্থ্য খাতের জন্য বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম এর যেসব সুপারিশ

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কাছে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম এর পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো:

১) উন্নত বিশ্বের হাসপাতাল গুলোতে যেখানে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা (হসপিটাল ফার্মসিস্ট), বহির্বিভাগ, জরুরী বিভাগ, সহ সকল বিভাগ এমনকি হাসপাতালের ওয়ার্ডেও সফলতার সাথে চিকিৎসক এবং নার্সদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে, সেখানে ১৯৬৫ সালে ফার্মেসি শিক্ষা চালু হলেও আজ ও বাংলাদেশে প্রকৃত হসপিটাল ফার্মাসিস্ট (গ্র্যাজুয়েট) নিয়োগ হয়নি বলে দেশের রোগীরা ওষুধ পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার ভূল ব্যবহার, সঠিক ডোজ এর অভাব, সহ নানা সমস্যায় পড়ছেন। এমনকি ভূল ওষুধ সেবনে এদেশে মৃত্যুর মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে অতীতে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবাকে উন্নত বিশ্বের মতো সফল করে গড়ে তুলতে হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রয়োজন।

বিবেচ্চ্য বিষয়;

(ক) ২০১৮ সালের বাংলাদেশ গ্যাজেট (অতিরিক্ত সংখ্যা) মার্চ ২৪, ২০১৮, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়, প্রশাসন (১) শাখা তফসিল ১ বিধি ২(খ) ও ৩ দ্রষ্টব্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ক্রমিক নং ১২ ও ১৩০ নম্বরে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (গ্রেড ৯) এবং ১৩৬ নম্বরে ফার্মাকোলজিস্ট (গ্রেড ৯) সরাসরি নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

(খ) ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর "সরকারি হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট পদ সৃজন বিষয়ক" একটি পরিপত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে বলা হয় বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতালে বহিঃ বিভাগে ফার্মেসিতে ১ জন এবং অন্ত বিভাগে প্রতি ৫০ শয্যার বিপরীতে একজন করে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের লক্ষ্যে পদ সৃজন এবং ফার্মেসি সার্ভিস অধিদপ্তর বা পরিদপ্তর গঠনের কথা, উল্লেখ করা হয়েছে।

২) একজন স্বনামধন্য ফার্মাসিস্টকে বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞ।

এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি স্থায়ীভাবে ফার্মাসিস্টদের জন্য নির্ধারণ করতে হবে যাহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিবেচ্য বিষয়;

একজন অভিজ্ঞ গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট জানেন একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি), কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি ফার্মাসিটিক্যাল কম্পানির ম্যানপাওয়ার ম্যানেজমেন্ট, সেটাপ রাইট পিপল ইন রাইট প্লেস, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্টিভিটি, ইফেক্টিভ ইউজ অফ ম্যানপাওয়ার, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট। সর্বোপরি একটি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি পরিচালনা করার জন্য সকল বিষয়ই পারদর্শী একমাত্র একজন অভিজ্ঞ গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট।

৩। পরবর্তীতে ঔষধপ্রশাসন অধিদপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল পদটি একজন স্বনামধন্য গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট এর জন্য নির্ধারণ করিতে হবে।

৪। ওষুধ প্রশাসনের প্রতিটি জেলা অফিসে অন্তত ২ জন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করি।

বিবেচ্য বিষয়;

(ক) ওষুধ প্রশাসনের প্রতিটি জেলায় ওষুধের সঠিক বিপনন, বাজারজাতকরণ, ওষুধের সংরক্ষণ পর্যবেক্ষণে একমাত্র গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টই যথাযথ ভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

(খ) মানসম্মত ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিতে ফার্মেসি পরিদর্শনেও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট দক্ষতার সাথে তদারকি করতে পারেন।

উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনায় নিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে অন্তত প্রতিটি ১০০ শয্যার হসপিটালের ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো পরিদর্শক পদে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগে অগ্রনী ভূমিকা রাখবেন বলে আশা ব্যক্ত করছি।

৫। স্বাস্থ্য সংস্কার বিষয়ক কমিটিতে একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য বিশেষ অনুরোধ।

৬। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল কমিটিতে একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (সংক্ষেপে বিপিএফ) একটি অরাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন। এদেশের ফার্মেসি পেশার বিকাশ, উন্নয়ন, ফার্মেসি সংক্রান্ত শিক্ষার ক্রমাগত মানোন্নয়ন, জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ফার্মাসিস্টদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষা ইত্যাদি বিবিধ বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ সংক্রান্ত অন্যান্য সংস্থার সাথে কাজ করে আসছি যাদের মধ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ, ওষুধ শিল্প সমিতি ইত্যাদি অন্যতম। বিগত ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সর্বপ্রথম ফার্মেসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ দেশে ৪৩টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ থেকে শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা সম্মানের সাথে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও কমিউনিটি ফার্মেসিগুলোতে পেশাগত কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দেশে-বিদেশে মিলিয়ে বর্তমানে আমাদের সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ৩০ হাজারেরও অধিক।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন