ডার্ক মোড
Saturday, 27 April 2024
ePaper   
Logo
সৌন্দর্য পিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে মিরিঞ্জা পর্যটন

সৌন্দর্য পিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে মিরিঞ্জা পর্যটন

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পর্যটনের লিলাভুমি বান্দরবানের লামা।চোখ জুডানো সবুজ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অরণ্যরানী লামায় রয়েছে সর্পিল ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড পাহাড় ও পাহাড়ের বুক চিরে বহমান নদী।মনোরম দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্রময় সাংস্কৃতির উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ লামা, ঠিক যেন শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মতন।সবুজ-শ্যামল গিরি শ্রেনীর এক অপরূপ দৃশ্য সৌন্দর্য পিপাসুদের দিচ্ছে হাতছানি।

পর্যটনের এ অপার সম্ভাবনা দেখে তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার পরিষেদের সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ২০০৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর লামায় প্রায় ১৬ একর পাহাড়ি ভূমিতে তৈরি করেন মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স।কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে সুরম্য গিরিদ্বার,রাত্রিযাপনের বাংলো-বনরত্না,মিনি শিশু পার্ক, রেস্তোরাঁ,গোলঘর-মালঞ্চ।পর্যটকদের আকর্ষণ করতে কমপ্লেক্সের মিরিঞ্জা পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে পাহাড় চূঁড়ায় ইতিহাস বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজের আদলে নির্মাণ করা হয় ইট পাথরের টাইটানিক।প্রকৃতি প্রেমীদের মনে বেশ সাড়া ফেলে টাইটানিক ও মিরিঞ্জার এই অপরূপ দৃশ্য।উঁচু নিচু পাহাড়,সর্পিল ঝিরি,ঝর্ণাধারা,বুনো ফলের মিষ্টি গন্ধে ছুটে আসে এখানে হাজারো পর্যটক।

চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া হতে লামা-আলীকদম সড়কের ১৬ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত লামার এক নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি।সমৃদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট ওপরে যত দূর তাকানো যায় শুধু সাদা মেঘের ভেলা।নিচে সবুজের ছড়াছড়ি।মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সাদা ঝর্ণা ধারা আর আদিবাসীদের টংঘর। নাকে আসছে বুনো ফুলের মিষ্টি সুবাস।নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে নির্মল আনন্দের রাজ্যে এমন প্রকৃতির বুক চিরে গড়ে উঠেছে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ এক শান্তিধাম মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স।পর্যটনটি শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যাপক সাড়া ফেললেও অযত্ন অবহেলায় মাঝে কয়েক বছর কেটেছে বেহাল দশায়।ফলে দর্শনার্থীও আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

গত বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে।নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার।ঝরাঝির্ণ মিনি শিশুপার্কটি সংস্কার করে কছিুটা অধুনিক মানের করা হয়েছে।সংস্কার হয়েছে পাহাড় চুড়ায় ইট পাথরে নির্মিত টাইটানিকের।আবারও নতুন করে অপরুপ সৌন্দর্যে সেজেছে মিরিঞ্জা পর্যটন।সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঢল নামছে দর্শনার্থীর। তবে এখানে রয়েছে পানির সমস্যা। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে দেড় হাজার ফুট উপরে হওয়ায় পর্যটন ও আশপাশ এলাকায় নেই কোন খাবার ও ব্যবহারের পানি।পানি সমস্যা সমাধানে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ।

স্থানীয়রা জানান,পর্য়টন এলাকায় পাহড়ের নিচে একটি বাঁধ দিলে কয়েক একর জায়গাজুড়ে বিশাল একটি লেক তৈরি হবে।এতে সারা বছরের পানি সঞ্চিতসহ লেকজুড়ে রংবেরং এর ডিঙি নৌকা ও স্প্রীট বোটে চড়ার সুযোগ তৈরি হবে পর্যটকদের। পর্যটনের দেখাশুনা করা কেয়ারটেকার শহিদুল ইসলাম জানান,নতুন নতুন অবস্থায় পিকনিক দলসহ প্রতিদিন ২শ থেকে ৩শ পর্যটক আসে এখানে।আগেরমত এখন আর পর্যটক আসেনা।কারন কি জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে শহিদুল বলেন,এখানে পানির ব্যবস্থা নেই।স্থানীয়দের কাছ থেকে এক কলসী পানি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় কিনতে হয় পর্যটকদের।পানির সমাধান করা না গেলে পর্যটনের জন্য নির্মিত সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে ধীরে ধীরে।

বিশেষ সুত্রে জানাযায়,তৎকালে মিরিঞ্জা পর্যটনে ঝুলন্ত সেতুর জন্য ৩ কোটি,বাঁেধর কাজে ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।বাঁধের কাজ শুরু হলে বর্ষা আসায় কাজ শেষ না হতেই বাঁধটি ভেঙে যায়।আর অদৃশ্য কারনে বরাদ্দকৃত ঝুলন্ত সেতু চলে যায় জেলা সদর বান্দরবানে।সেথেকে ১৫/১৬ বছর পার হলেও মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। মিরিঞ্জা পর্যটন ছাড়াও লামায় আরও অনেকগুলি সম্ভাব্য স্পট রয়েছে।এগুলির মধ্যে রয়েছে মিরিঞ্জা ভ্যালি যেখানে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্ত ও সূর্যদোয়ের দৃশ্য।এটি পর্যটন করা গেলে দ্বিতীয় সাজেক হবে।এছাড়া রয়েছে রুপসীপাড়া ইউনিয়নের মাছকুম যা জেলার রুমা উপজেলার বিখ্যাত পর্যটন স্পট দেবতা কুমের মতই।

আছে সুখ ও দুখ পাহাড় যেখানে দেড় হাজার ফুট উপরে সংযোগ দেওয়া যাবে ক্যাবল ক্যার।সুখ পাহাড়ের উপরে রয়েছে বিস্তর্ণ সমতল ভুমি।যেখানে নিমার্ণ করা যাবে একাধিক কটেজ,আধুনিক মানের রিসোর্ট,ওয়ার্চ টাওয়ার।ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যাবে মাতামুহুরী নদীর দৃশ্য,উঁচু,নিচু পাহাড়,সর্পিল ঝিরি-ঝর্ণা আর সবুজ প্রকৃতি দেখার এক অপুরন্ত সুযোগ।
সম্ভাবনাময় এত স্পট থাকা সত্তে¡ও পর্যটনে পিছিয়ে আছে লামা। বারবার প্রসার ঘটছে বান্দরবান জেলা কেন্দ্রিক।এতে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার মানুষের মধ্যে।মিরিঞ্জা পর্যটন এলাকায় একটি বাঁধ দেওয়া গেলে এটি জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে মনে করেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন