সূর্য পুকুর ভরাট চলমান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাসিকের প্রতিবেদন
শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী
রাজশাহী মহানগরীর ৩নং ওয়ার্ড বহরমপুরের সূর্য পুকুর ভরাটে এলাকাবাসীর বাধা সত্বেও কৃষক লীগ নেতার ভরাট কার্যক্রম চলমান ; অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভরাট বন্ধে সিটি কর্পোরেশন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে রাজশাহী মহানগর কৃষকলীগ সভাপতি মোর্শেদ কামাল রানা সূর্য পুকুর ভরাট কাজ শুরু করেন। সেসময় এলাকাবাসী বাধা দিলেও তাতে কোন লাভ হয়নি। তবে পটপরিবর্তনের পরপরই রানা গা ঢাকা দিলে পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমানে ঐ এলাকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর সহযোগিতায় আবারও পুকুর ভরাট কাজ শুরু হয়। এলাকাবাসী বাধা দিলেও পুকুর ভরাট বন্ধ না হওয়ায় তারা গত ৩ নভেম্বর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দাখিল করে।
৩নং ওয়ার্ড বহরমপুর মৌজার দাগ নং ১১০ পুকুরটি ভরাট না করা প্রসঙ্গে" বিষয় উল্লেখ করে অভিযোগে এলাকাবাসী বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড বহরমপুর মহল্লার মধ্যভাগে সূর্য পুকুর নামে পরিচিত পুকুরটি তৎকালিন আওয়ামী সরকারের কৃষকলীগের সভাপতি লক্ষিপুর নিবাসী রানা পুকুরটি আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এলাকাবাসীর বাধা উপেক্ষা করে ভরাট শুরু করেন। ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গা ঢাকা দেন।
বর্তমানে এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় পুনরায় পুকুরটি ভারাট করতে এলে এলাকাবাসী বাধা দেন কিন্তু তিনি কারও বাধা না মেনে পুকুরটি ভারাট করতে চাচ্ছেন। তারা উল্লেখ করেন, বহরমপুর অনেক বড় একটি মহল্লা। এখানে আধুনিক বাড়ীঘর তৈরি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমানে না থাকায় পুকুরটি পুনরায় সংস্কার করা অতিব প্রয়োজন মনে করে এলাকাবাসী। কারণ অত্র বহরমপুর মহল্লায় আর কোন পুকুর নেই। অতএব, উপরোক্ত বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে সু-বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুকুর ভরাট বন্ধ এবং সংস্কার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আপনার সদয় মর্জি হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ৭ নভেম্বর-২৪ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এরপর ১২ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ প্রতিবেদনে তারা বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের আলোকে উপরোক্ত প্রাকৃতিক জলাধার আইন অমান্য করে নালিশী পুকুর ভরাট করে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করায় জনস্বার্থে উক্ত পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করা আবশ্যক। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে উল্লেখিত পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে পুকুরের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে পত্র দেয়া যায়। উপরোক্ত তথ্য সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করা হলো।
জানতে চাইলে কৃষকলীগ নেতা মোর্শেদ কামাল রানা বলেন, আমি গা ঢাকা দেইনি কখনও। পুকুরের মালিক আমি সহ চারজন। পুকুরের ভরাটের কাজ আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কোন ভরাট কাজ চলছে না৷ আমি এই পুকুর লক্ষীপুর এলাকার সুরমান সহ কয়েকজনকে বায়না দিয়েছি। এখন পুকুরের কাজ ওদের হাতে।
এ বিষয়ে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের সদস্য সচিব রওশন আলী বলেন, রাজশাহী মহানগরীর অনেক পুকুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা ভরাট করছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। মহানগরীর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় পুকুর ভরাট বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।
হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি, পরিবেশবিদ ও লেখক মাহাবুব সিদ্দিক বলেন, এসব পুকুর ভরাট করতে দেয়া হবে না। শহরে এ পর্যন্ত যেগুলো ভরাট হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সেগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এখনও যেগুলো বড় বড় পুকুর আছে, সেগুলোকে রক্ষার জন্য নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আমরা শহরের প্রান বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবো।
এদিকে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামাত খান বলেন, রাজশাহী শহরের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য পুকুর ভরাট বন্ধ করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আর কোন পুকুর ভরাট করতে আমরা দেব না।