সীমান্তে নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ, দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ। উচ্চ-পর্যায়ের সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে এমনই দাবি করা হয়েছে।
এমনকি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পরই ভারত সীমান্তে বাংলাদেশ ড্রোন মোতায়েন করেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজ জানিয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের মানুষ যখন কানাডিয়ান গায়ক ব্রায়ান অ্যাডামসের মিউজিক্যাল কনসার্টে মগ্ন ছিল, তখন বাংলাদেশের নজরদারি ড্রোন রাজ্যটির চেরাপুঞ্জি এবং শেলার কাছে ঘোরাফেরা করেছে।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, উচ্চ-পর্যায়ের সূত্র নর্থইস্ট নিউজকে জানিয়েছে— বাংলাদেশের কয়েকটি বায়রাক্টার টিবি-টু মনুষ্যবিহীন আকাশযানকে (ইউএভি) মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এবং শেলার দক্ষিণে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে দেখা গেছে।
এসব ইউএভিগুলো (ড্রোন) বাংলাদেশের ছাতক ও সুনামগঞ্জের উত্তরে শূন্যরেখার প্রায় ২০০ মিটার দক্ষিণে উড়ছিল বলেও ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রীর ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ হওয়ার পরপরই মেঘালয় সীমান্তে বাংলাদেশি ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে।
নর্থইস্ট নিউজের প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সীমান্তের কাছে উড্ডয়নরত এসব ড্রোনের মধ্যে একটির ট্রান্সপন্ডার কোড টিবি২আর১০৭১ (TB2R1071) এবং এটি রাজধানী তেজগাঁও এয়ারবেস থেকে পরিচালিত হচ্ছিল।
এছাড়া অনুরূপ একটি ইউএভি পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের কাছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাডার শনাক্ত করেছে বলেও দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং এই ঘটনা সীমান্তে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ইউএভি বা ড্রোন মোতায়েনের প্রতিফলন বলে ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও সীমান্তে বাংলাদেশের ইউএভি মোতায়েনের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনও ধরনের “নাশকতামূলক কার্যকলাপ” এড়াতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
নর্থইস্ট নিউজ বলছে, বাংলাদেশের এই ইউএভিগুলোকে তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তুরস্কের বাইকার টেকনোলজি কোম্পানি ২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন উৎপাদন ও বিক্রি করতে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোন বিশেষ নজর কেড়েছে।
বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন হচ্ছে এমন এক ধরনের যুদ্ধাস্ত্র যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নজরদারি এবং হামলা চালানোতেও অংশ নিতে পারে। এই ড্রোনে একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক— যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।
এর ফলে এটা দিয়ে আগে থেকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা যায় এবং তারপর দিক-নির্ণয় করে চলতে সক্ষম বোমা দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানা যায়।
এটি জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হলো— মূল কমান্ড সেন্টার থেকে দূরে কোথাও একটি কন্টেইনার বা ট্রাকে মোবাইল বেজ স্থাপন করে সহজে ড্রোন পরিচালনা করা যায়। ফলে মিশনের প্রয়োজনে যেকোনও স্থানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন বা হামলা চালানো যায়।
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনে চারটি লেজার গাইডেড স্মার্ট রকেট সংযুক্ত করা যায়, যা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। ড্রোনটি ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২২২ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে।
এছাড়া বেজ স্টেশন থেকে তিনশ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ড্রোনটি চালানো যায়। এর ভেতরে একমন কিছু সেন্সর রয়েছে, যার ফলে জিপিএসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে ন্যাভিগেশন করতে পারে। সর্বোচ্চ ৭০০ কেজি ওজন নিয়ে ড্রোনটি উড়তে পারে। মোট জ্বালানি ধরে ৩০০ লিটার।
ড্রোনটি টেক-অফ, ল্যান্ডিংসহ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে। এর কম্পিউরাইজড সিস্টেমে তিনটি অটো পাইলট প্রোগ্রাম রয়েছে। বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনটি ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় থেকে কার্যক্রম চালাতে পারে। তবে আকাশে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ফিট পর্যন্ত উড়তে এবং সর্বোচ্চ ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট ওড়ার রেকর্ড রয়েছে।
ড্রোনে থাকা রিয়েল ইমাজেরি টাইম ট্রান্সমিশন সিস্টেমের ফলে একাধিক ব্যবহারকারী একইসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চমানের ভিডিও দেখতে পারেন। ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ট্যাবলেট বা মোবাইলেও নজরদারি করা সম্ভব।
নর্থইস্ট নিউজের দাবি, কিছু দিন আগে দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং পশ্চিম মিজোরামের আন্তর্জাতিক সীমান্তেও একই রকমের ইউএভি দেখা গিয়েছিল।