ডার্ক মোড
Friday, 29 March 2024
ePaper   
Logo
সিসি ক্যামেরা স্থাপন না করে বিল পরিশোধের নামে কোটি টাকার অনিয়ম

সিসি ক্যামেরা স্থাপন না করে বিল পরিশোধের নামে কোটি টাকার অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভার স্মৃতিসৌধ এলাকায় কোনো সিসি ক্যামেরা স্থাপন না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম বিভাগ-৬-এর প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে গণপূর্ত কাঠের কারখানা বিভাগে উৎপাদন শূন্য হওয়ার পরও বছরে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর ই/এম বিভাগ-৮-এ দুটি গাড়ির বিপরীতে ৩১ জন চালকের পেছনে বছরে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ সালের অডিট রিপোর্টে এই অনিয়ম ধরা পড়েছে।

অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল (ই/এম) বিভাগ-৬ ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় ৩টি ১৬ চ্যানেল বিশিষ্ট ডিভিআর, ১২টি পিটিজেড ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ৩টি ডিসপ্লে মনিটর, ১০টি ডে নাইট ভিশন ক্যামেরাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মালামাল চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য পর পর দুদিনে একজন ঠিকাদারকে তিনটি কার্যাদেশ দেয়। উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর পত্র স্মারক নং-৩৫০২ (তারিখ-১৪-০৬-২০১৬) এবং স্মারক নং-৩৫০৭ ও ৩৫০৮ (তারিখ-১৫-০৬-২০১৬)-এর মাধ্যমে চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদারকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হলেও কাজগুলো সমাপ্ত করা হয়নি। ওই বছরের ২০ অক্টোবর অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা সাভার স্মৃতিসৌধে সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান- কোনো পোলে কোনো সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি। পরে দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদকে জিজ্ঞাসা করে জানা যায় মালামালগুলো একটি কার্টুনের ভেতরে প্যাকেটজাত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তার কাছে সে মালামালের স্টক রেজিস্ট্রার চাইলে অডিট বিভাগকে তা দেখাতে পারেননি।

তা ছাড়া চুক্তিতে উল্লেখিত মালামালগুলো ইউএস/জাপানি ব্র্যান্ডের সরবরাহের কথা উল্লেখ থাকলেও সেগুলো প্যানাসনিক চায়নার তৈরি বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই সময়ে ই/এম বিভাগ-৬-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর খান, যিনি বর্তমানে ই/এম ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলমগীর খানের নিজস্ব একটি ঠিকাদার সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা ঘুরেফিরে বেশিরভাগ কাজ পায়।

এদিকে গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৮-এর সরবরাহকৃত জনবলের তালিকা অনুযায়ী ২টি গাড়ির বিপরীতে ৩১ জন চালকের বেতন পরিশোধ করায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৭ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিট বিভাগ বলছে- সচল দুটি গাড়িতে দুজন চালক কর্মরত থাকায় মাসে প্রত্যেকের ২৫ হাজার টাকা হিসেবে বছরে বেতন প্রাপ্য ৬ লাখ টাকা। ফলে ২৯ জন অতিরিক্ত চালকের পেছনে ৮৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে, যা সরকারি অর্থের অপচয়।

অন্যদিকে গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের দিনে কার্যাদেশ প্রদান করার পরের দিনই ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়- ২০১৬ সালের ২৯ জুন মজুমদার ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করার পরের দিন ৩০ জুন এই বিল পরিশোধ করা হলেও বাস্তবে কোনো কাজ করা হয়নি। অর্থবছর শেষ হওয়ায় বাজেটের তামাদি এড়াতে তড়িঘড়ি করে কার্যাদেশ দেখিয়ে বিল দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া গণপূর্ত কাঠের কারখানা বিভাগ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২৯ জনবলের পেছনে ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় করলেও উৎপাদন শূন্য বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আর উৎপাদন না থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো দীর্ঘদিন পড়েছিল। ফলে এগুলো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া পর্যাপ্ত কারিগরি লোক থাকার পরও উৎপাদন শূন্য অথচ বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা নিলেও কোনো কাজ করছে না। তা ছাড়া অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবল থাকার পরও দৈনিক মজুরি ও চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োজিত রয়েছে, এতে সরকারের আর্থিক অপচয় হচ্ছে বলে অডিট বিভাগ জানিয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলমগীর খান বলেন, অডিট আপত্তির জবাব সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অডিট বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন