সাতক্ষীরা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে রি-এজেন্টের অভাবে একমাস বন্ধ সিবিসি পরীক্ষা, ভোগান্তি চরমে
নিজস্ব প্রতিনিধি
রি-এজেন্টের অভাবে প্রায় এক মাস ধরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে রক্তের সিবিসি পরীক্ষা। ফলে রোগীদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে তেমনি বেড়েছে চিকিৎসা ব্যয়। এছাড়া এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিটিজেন চার্টারের তথ্য অনুযায়ী- রক্তের সিবিসি পরীক্ষা, সিআরপি, এস ক্রিয়েটিনিন, সিরাম ইলেকটোলাইট, সিরাম এলবুমিন, সিরাম বিলুরুবিন, সিরাম আইরন, এন্টি এইচ বি ই, সিরাম এলডিএইচ, ডেঙ্গু, সিরাম ক্লোলেস্টেরল, ইউরিক এসিড, এইচবিএ ১ সি, বøাড সুগার (ফাস্টিং/রেন্ডম), আইসিটি ফর ম্যালেরিয়া, বøাড গ্রæপিং, বøাড স্ক্রিনিং, বিটি, সিটি, ক্রস ম্যাচিং, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাফী, এক্সরে এবং ইমেজিং ১৮০টি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা খুবই কম খরচে করতে পারবেন সেবা গ্রহীতরা।
এখানে রক্তের সিবিসি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ভেবে এ পরীক্ষা করাতে ব্যয় হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। সিআরপি পরীক্ষার মূল্য ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। হাসপাতাল ভেদে ব্যয় হয় ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে থাকেন। সিরাম ক্রিটিনিন-৫০ টাকা। এ পরীক্ষাটি করাতে বেসরকারি হাসপাতাল ভেদে ব্যয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সিরাম ইলেকটোলাইট পরীক্ষা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০ টাকা। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকে এ পরীক্ষা করাতে ব্যয় হয় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। সিরাম এলবুমিন -২০০ টাকা। প্রতিষ্ঠান ভেদে এতে ব্যয় হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। লিপিড প্রফাইল পরীক্ষা মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩০০ টাকা। প্রতিষ্ঠান ভেদে এতে ব্যয় হয় ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সিরাম কোলেস্টেরল পরীক্ষা মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৫০০ টাকা। প্রতিষ্ঠান ভেদে এতে ব্যয় হয় ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা। চেস্ট এক্স-রে (ডিজিটাল)-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষার ব্যয় যথাক্রমে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আল্ট্রাসনোগ্রাফী ডাবল হোল এবডোমিন ২২০, সিঙ্গেল ১১০, প্রেগনেন্সি প্রফাইল ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষার ব্যয় যথাক্রমে ডাবল হোল এবডোমিন ৬০০-৮০০, সিঙ্গেল ৪০০-৫০০, প্রেগনেন্সি প্রফাইল ৪০০-৫০০। চেস্ট সিটি স্ক্যানে-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০০ টাকা। বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয় ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। সিটি ব্রেনে ২০০০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বেসরকারিতে ২০০০ হাজার থেকে ৩০০০ টাকা নেওয়া হয়। এডডোমিন সিটি পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় ৪০০০। প্রতিষ্ঠান ভেদে এ পরীক্ষায় রোগীদের ব্যয় করতে হয় ৫০০০ থেকে ৮০০০ হাজার টাকা। তবে কয়েক মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে সিটি স্ক্যান মেশিন।
রুপালী খাতুন নামের এক শিশু রোগী অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চার ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে মেডিকেলে ভর্তি করি। শ^াস কষ্ট বেশী থাকায় থাকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে। চিকিৎসক আমার বাচ্চাকে দেখে বলেন, নিউমোনিয়া হয়েছে। বিষিয়টি নিশ্চিত হতে এবং আরও কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে বেশ কিছু টেস্ট দেন। কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিকেলে সিবিসি পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা মেডিকেল কলেজে যেতে বলা হয়। কিন্তু কলেজের জনবল কম থাকায় তারা রোগীর কাছ থেকে রক্ত নিতে আসতে পারবে না, রোগীকে রক্ত দিয়ে আসতে হবে। পরে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাথে করে নিয়ে বাচ্চার রক্ত দিতে কলেজে যেতে হয়েছে। এতে আমরা যেমন কষ্ট পেয়েছি বাচ্চাও কষ্ট পেয়েছে।
ফুলবিবি নামে একজন রোগীর স্বজন বলেন, শ্যামনগরের গাবুরা থেকে রোগী নিয়ে এসেছি। সাতক্ষীরা শহরের কিছুই চিনিনা। আমার রোগী আনা মাত্র রোগী দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে বলে। সেই ডাক্তার শহরের একটি ক্লিনিকের কথা বলে দেয়। ওই ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করালে রোগী দেখবেনা। রোগীর অক্সিজেন দেওয়া। কিভাবে নিয়ে যাবে বলেন। সরকারি হাসপাতালে এসেছি বিনামূল্যে সেবা নেব বলে। বেসরকারি ক্লিনিকে গেলে বেশি খরচ পড়বে। পরে ডাক্তারের কাছে অনেক অনুরোধ করে মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেছি। কষ্ট করে রোগীকে টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিক্যালের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী বলেন, বর্তমান পরিচালক খুবই ভালো মানুষ। আগের পরিচালক (ওএসডি) ডা. শিতল চৌধুরীকে প্যাথালজি এবং সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা দিতে হতো। বর্তমান পরিচালক এসব কোন ঝামেলায় যান না। কিন্তু হাতপাতালের একটি সিন্ডিকেট আছে তাদের কেউ কিছু করতে পারে না। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলেও এই সিন্ডিকেটের কিছুই হয়নি। তারা তাদের অপকর্ম করেই চলেছে। এই সিন্ডিকেটের কাছে পুরো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জিম্মি।
মেডিকেল কলেজের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের শিখানোর জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করিয়ে থাকি। আমাদের এই বিভাগে খুব বেশি জনবল নেই। সেজন্য হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে বøাড নিয়ে আসা কঠিন ব্যাপার হয়ে যায়। মেহেরুননেসা নামে একজন রোগী স্বজন বলেন, এখানে সিবিসি পরীক্ষা মাত্র ১৫০ টাকা সেটা বাইরের কোন ক্লিনিক থেকে করতে হলে ৪০০ টাকা পড়ে যায়। যেটা আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্যই খুবই কষ্টের বিষয়। এখানে গরীব লোক ছাড়া বড় লোক কেউ তো সেবা নিতে আসেনা।
তিনি আরও বলেন, এখানে বিশেষজ্ঞ, ইন্টার্নি চিকিৎসদের ব্যবহারে মন ভরে যায়। তারা মা-বাবা ছাড়া কথা বলে না। দুই একজন নার্স ছাড়া সকলের ব্যবহার খুবই ভালো। বর্তামন মেডিকেলে সেবার মান খুবই ভালো। সাতক্ষীরা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট আব্দুল মালেক বলেন, বেঙ্গল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের সরবরাহ করার রি-এজেন্ট ছাড়া কোন রি-এজেন্ট দিয়ে মেশিন কাজ করবো না। এতে করে আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তারা যে দামে বলবে আমাদের সেই দামে কিনতে হবে। আগের টেন্ডারের যে রি-এজেন্ট দিয়েছিলো তার মেয়াদ খুব কম ছিলো বলে ফেরত দিয়েছি। তাদের দ্রæত দেওয়ার জন্য বলেছি। এটি বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। তারা আমাদের জানিয়েছে নতুন রি-এজেন্ট এসেছে। জাহাজে আটকে আছে। যত দ্রæত সম্ভব আমাদের সাপ্লাই দেবে।
তিনি আরও বলেন, রি-এজেন্টর অভাবে ২০ দিন বন্ধ থাকার পর মাঝে দুই চারদিন চালু করেছিলাম রি-এজেন্ট না থাকার কারণে আবারও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে মাস ধরে সিবিসি পরীক্ষা হচ্ছে না। গত দুই দিন আগে একটি রি-এজেন্ট এসেছে। আরেকটি রি-এজেন্ট পেলেই সিবিসি পরীক্ষা হবে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: কুদরত-ই-খুদা বলেন, সিবিসি ও হরমোনের রি-এজেন্ট বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সিবিসি রি-এজেন্ট যেটা দেওয়া হয়েছিলো সেটার মেয়াদ ছিলো মাত্র দুই মাস সেজন্য সেগুলো ফেরত দিয়েছি। আমাদের বেশি মেয়াদের রি-এজেন্ট দিতে বলেছি। এজন্য কোম্পানির বিল আটকে দিয়েছি। তাদের বলেছি আমাদের রি-এজেন্ট না দেওয়া পর্যন্ত বিল দেব না। মালামাল ফেরত দিয়ে পুনরায় আনতে একটু সময় লাগে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রæত পেয়ে যাবো। তখন ওইসব পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি এই জেলার সন্তান এই অঞ্চলের মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য আমি সব সময় চেষ্টা করি। মেডিকেল সেবা নিতে এসে মানুষ ফিরে যাবে এটি আমার কষ্ট দেয়। আমরা অনেক কিছু করতে চেয়েও করতে পারিনা। বাজেট বরাদ্দের জন্য অধিদপ্তরে আবেদন করেও অনেক কিছু বরাদ্ধ পেতে বিলম্ব হয়। সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে সেটা মেরামতের জন্য ৫৮ লাখ টাকা দরকার। মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এখনও অনুমোদ পাইনি। অনুমোদন পেলেই সিটি স্ক্যান চালু করবো।
সুন্দরবনে বন বিভাগের অভিযানে বনদস্যুর কবল থেকে ১০ জেলে উদ্ধার
পশ্চিম সুন্দদরবনে বন বিভাগের অভিযানে নবাগত বনদস্যু বাহিনীর কবল থেকে মালপত্রসহ ১০ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বেলা ২টার দিকে বুড়িগোয়ালিনী বনস্টেশন ও কদমতলা বনস্টেশন অফিসের যৌথ অভিযানে গহিন সুন্দরবনের তক্তাখালী নামক স্থান হতে ওই ১০ জেলেকে উদ্ধার করা হয়। এসময় বন বিভাগের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবন্ধ ডাকাত দল বন বিভাগকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। বন বিভাগের সদস্যরা পাল্টা ৫রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বনদস্যু বাহিনী মালপত্র ফেলে সুন্দরবনে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ১ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি, ১টি সোলার প্যানেল ও ৩টি নৌকা উদ্ধার করে আভিযানিক দল।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন- উপজেলার চুনকুড়ি গ্রামে দাউদ গাজীর ছেলে আলিম গাজী, বাহার আলী সরদারের ছেলে নূরুল ইসলাম, আলিম গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম, হরিনগর গ্রামের ফজলে সানার ছেলে হাফিজুর রহমান, খলিলুর রহমানের ছেলে মফিজুর রহমান, মৃত ইমান আলী সানার ছেলে মুছাক সানা, ছোট ভেটখালী গ্রামের মজিদ গাজীর ছেলে শফিকুল গাজী, বড়ভেটখালী গ্রামের মৃত জয়নাল গাজীর ছেলে নজরুল ইসলাম এবং দুরমুজখালী গ্রামে লিয়াকত মল্লিকের ছেলে রফিকুল মল্লিক।
সার্বিক বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বুড়িগোয়ালিনী বন স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) জিয়াউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সুন্দরবনে বন দস্যু বাহিনীর উপস্থিতি জেলেদের মাধ্যমে জানতে পেরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বনদস্যুর কবল থেকে ওই ১০ জেলেকে উদ্ধার করা হয়।