সাতক্ষীরায় অবৈধ ইটভাটায় কয়লার সাথে পুড়ছে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ারের কালি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরায় সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার সাথে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি। ইটভাটায় কয়লার সাথে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখিন হচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া অবাধে কাঠ পোড়ানোর কারণে একদিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়াপত্র ও সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা।Ñএমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সাতক্ষীরায় সে নির্দেশনা মানছে না কেউ। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তর হাতেগোনা দু-একটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে সাতক্ষীরাতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় ১২৫টি ইটভাটার মধ্যে ৩০টি ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চালু ৯৫টি ইটভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টির। বাকি ৬৫টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোন সরকারি লাইসেন্সও নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ইটভাটা মালিকরা অবৈধভাবে চালাচ্ছে এসব ইটভাটা। উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে পরিবশে অধিদপ্তর অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারছে না।
এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ, তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি। টায়ার পোড়ানো কালির ধোয়া ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি ব্যাধির সহায়ক বলে জানান চিকিৎসকরা। ফলে বায়ু দূষণের কবলে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটার আশেপাশে বসবাসকারি জনসাধারণ।
সরেজমিনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অধিকাংশ ইটভাটাগুলোতে কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি।
শহরের অদূরে বিনেরপোতা এলাকার একটি ইটভাটায় পোড়ানোর কাজে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু জ্বালানি কাঠ, প্লাস্টিক, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করে করে তারা ইট পোড়াচ্ছেন। ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করলে প্রতিটি ইটে খরচ কিছুটা কম হয়। এজন্য অধিক লাভের আশায় ইটভাটা মালিকরা কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করে।
ইটভাটায় জ্বালানির কাজে কয়লার বদলে কাঠের ব্যবহার প্রসঙ্গে একটি ইটভাটার ম্যানেজার জানান, প্রথমে ইটভাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে প্লাস্টিক, তুষকাঠ ও টায়ারের কালি ব্যবহার করা হয়।
নাগরিক নেতা আলিনুর খান বাবুল বলেন, উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি। টায়ার পোড়ানো কালির ধোয়া ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি ব্যাধির সহায়ক বলে মন্তব্য করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ফলে বায়ু দূষণের কবলে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটার আশেপাশে বসবাসকারি জনসাধারণ।
এ প্রসঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজের সহযোগি অধ্যাপক ক্যান্সার সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এতে বৃদ্ধ এবং শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এছাড়া টায়ার পোড়ানো কালির ধোঁয়া খুবই বিষাক্ত। এই ধোঁয়া ক্যান্সারের সহায়ক। ফলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
এবিষয় সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলায় বর্তমানে ৯৫টি ইটভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টির। বাকি ৬৫টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটা মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের ইটভাটা পরিচালনা করছেন। যে কারণে উচ্চ আদালতের রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, জেলার ব্রিক ফিল্ডগুলো কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো শুরু করেছে জানতে পেরে আমরা অভিযান পরিচালনা করা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইটভাটায় কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো বন্ধে খুব শীঘ্রই অভিযান শুরু করা হবে।
এবিষয়ে জানার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সরকারি নাম্বারে একাধিকবার ফোনকল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের অভিযানে ১৯জন গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরায় ২৪ ঘন্টায় পুলিশের অভিযানে মাদক মামলায় ৬জনসহ ১৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের এই সংখ্যা চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসময় ১০ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৫ পিস ইয়াবা ও ৩৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। জেলা পুলিশের নিয়মিত প্রেসবিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা পুলিশের প্রেসবিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের অভিযানে ১০ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৫ পিস ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৩টি মামলায় ৫ জনসহ মোট ১০জনকে আটক করা হয়। শ্যামনগর থানা পুলিশের অভিযানে ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় ১জনসহ ৪জনকে আটক করা হয়। এছাড়া কলারোয়া থানায় ১জন, কালিগঞ্জে ২জন, দেবহাটায় ১জন এবং পাটকেলঘাটায় ১জনকে আটক করা হয়।