শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্টের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার মাত্র সাত সপ্তাহ পর শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দেশটিতে অনুষ্ঠিত আগাম এই নির্বাচন শেষে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। প্রায় প্রচারণাবিহীন এই নির্বাচনে ৮ হাজার ৮০০ জনের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফল শুক্রবার প্রকাশ করা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
পার্লামেন্টের ২২৫ আসনের মধ্যে ১৯৬ জন সংসদ সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হবেন। বাকিদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসাবে ভোটের হারের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলগুলো মনোনীত করবে।
দেশটির ভোট পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা পিপলস অ্যাকশন ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের নির্বাহী পরিচালক রোহানা হেত্তিয়ারাচ্চি বিবিসিকে বলেন, নির্বাচনে ৪৯টি রাজনৈতিক দল ও ২৮৪টি স্বতন্ত্র গ্রুপের ৮ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এবারের নির্বাচনে প্রায় এক হাজার প্রার্থী সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খাদ্য এবং জ্বালানির ঘাটতি ঘিরে ২০২২ সালে দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়। দেশটিতে জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। পরে রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে দেশটিতে নতুন সরকার গঠন করা হয়।
দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় গোটাবায়া সরকার। পরে শ্রীলঙ্কার জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি বেলআউট প্যাকেজ চূড়ান্ত করে আইএমএফ। এরপরও দেশটিতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ তেমন লাঘব হয়নি।
কলম্বোর কাছের কাতুনায়েকে ফ্রি ট্রেড জোনের একটি পোষাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন ২৬ বছর বয়সী মঞ্জুলা দেবী। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘‘আগে আমরা যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম, এখনও একই ধরনের সমস্যার মাঝে আটকে রয়েছি। এমনকি আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য এখনও কোনও আর্থিক সহায়তা মেলেনি।’’
গত চার বছরে শ্রীলঙ্কায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। তবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে মাত্র ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
হিমাল সাউথএশিয়ান ম্যাগাজিনের ডেপুটি এডিটর রাইসা বিক্রমাতুঙ্গে বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কা এখনও ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি আইএমএফের বেলআউট পাওয়ার পরও দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।’’
‘‘আমি শ্রী জয়াবর্ধনপুরা জেনারেল হাসপাতাল থেকে মেসেজ টাইপ করছি। আকাশচুম্বী বিদ্যুতের ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য সরকারি এই হাসপাতালের লাইট এবং ফ্যান বন্ধ করে রাখছে।’’
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা। পরে ঋণ পুনর্গঠন চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল দেশটি। লঙ্কান পর্যবেক্ষকরা পার্লামেন্টের সাধারণ নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রত্যাশা করছেন। এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ ভোটার নিবন্ধন করেছেন।
তবে পার্লামেন্টের বিভক্ত ভোট শেষ পর্যন্ত অনুরা কুমারা দিশানায়েকের দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) উচ্চাভিলাষী সংস্কারের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই দলটি এবারের নির্বাচনে অন্যান্য দলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।