ডার্ক মোড
Friday, 10 January 2025
ePaper   
Logo
মুঠোফোন গ্রাহকদের ওপর বাড়তি করের বোঝা না চাপাতে টিক্যাবের আহ্বান

মুঠোফোন গ্রাহকদের ওপর বাড়তি করের বোঝা না চাপাতে টিক্যাবের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ভাবে ইন্টারনেট ও মুঠোফোন সেবায় কর বাড়িয়ে, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যে নাভিশ্বাস ওঠা জনগণের কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা না চাপাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)। ৯ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি: (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে প্রেরিত টিক্যাব সভাপতি মুর্শিদুল হক বিদ্যুৎ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুঠোফোন সেবার ওপর নতুন করে ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে পারে” গত কয়েকদিন যাবত দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এ সংবাদ ইতোমধ্যেই গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ—উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। রাজস্ব আদায় সহজ হওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি বছর এ খাতে নতুন ভাবে শুল্ক আরোপ করতো। গণমানুষের দাবি উপেক্ষা করে তারা ২০২৪—২৫ অর্থবছরের বাজেটে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে।

বর্তমানে সম্পূরক শুল্ক এবং সারচার্জ মিলে মোবাইল ইন্টারনেট ও টকটাইমের ওপর মোট ৩৯ শতাংশ কর আরোপিত আছে। আরও ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে তা ৪২ শতাংশে উন্নীত হবে। একজন গ্রাহক ১০০ টাকা মোবাইল রিচার্জের বিপরীতে ৩৯ টাকা পরোক্ষ কর দিয়ে কার্যকরীভাবে ৬১ টাকার সেবা গ্রহণ করেন। কর বৃদ্ধির পর, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জের বিপরীতে ৫৮ টাকার সেবা পাবেন। শুল্কের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ অথচ মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ও সেবার দিক দিয়ে অবস্থান সর্বনিম্নে। সরকারের শুল্ক বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে অপারেটরগুলো সেবার মান না বাড়িয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ও টকটাইম প্যাকেজের মূল্য নিজেদের ইচ্ছে মতো বৃদ্ধি করে। আদতে শুল্ক বৃদ্ধির সম্পূর্ণ দায় বহন করতে হয় গ্রাহকদেরই।

টিক্যাব জানায়, মূল্য বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমছে। বিটিআরসি’র হিসাবে গত অক্টোবর ২০২৪ (১২ কোটি ৩৪ লাখ) এর তুলনায় নভেম্বর ২০২৪ (১১ কোটি ৯০ লাখ) এ গ্রাহক কমেছে প্রায় ৪৪ লাখ। তাই নতুন ভাবে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গ্রাহকরা মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার আরো কমিয়ে দিতে পারেন। ফলে সরকার বাড়তি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যে ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে, সে লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে।

সংগঠনটি জানায়, মুঠোফোন সেবা এখন জনসাধারণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। নিত্যপণ্যের ব্যয় বৃদ্ধির মতোই মুঠোফোন সেবার ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বিগত সরকারের সময়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো পাল্লা দিয়ে ইন্টারনেট ও টকটাইম প্যাকেজের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের নাভিশ্বাস তুলেছে। ৫ আগস্টের ছাত্র—জনতার বিপ্লবের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুঠোফোন সেবার খরচ কমিয়ে গ্রাহকদের স্বস্তি প্রদান করবে বলে আমরা আশা পোষণ করেছিলাম। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারাও বিগত সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণকেই শ্রেয় মনে করছেন। ভুলে গেলে চলবে না দেশে সচল প্রায় ১৮ কোটি সিমের সিংহভাগ গ্রাহকই কিন্তু নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে রক্ত—ঘামে উপার্জিত প্রতিটি টাকা তাদেরকে অত্যন্ত হিসাব করে ব্যয় করতে হয়। টিক্যাব প্রত্যাশা করে, ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানে পাওয়া গণমানুষের কাক্সিক্ষত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে মুঠোফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন