ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য ভালোভাবে নিচ্ছে না সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক বিবৃতি অন্তর্বর্তী সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র তৌফিক হাসান।
মুখপাত্র বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিকবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং ভারত সরকারকে এটি জানিয়েছে। তাদের এটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক বিবৃতি বা বক্তব্য দিচ্ছে; সেটি আমাদের বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত রাখার জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
তৌফিক হাসান বলেন, একইসঙ্গে এটি বলা হয়েছে, আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এটির জন্য আসলে এ ধরনের বক্তব্য থেকে তাকে বিরত রাখাটা খুবই জরুরি।
শেখ হাসিনাকে বিবৃতি প্রদানে বিরত থাকার বিষয়ে দিল্লির বক্তব্য জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। তিনি বলেছেন, এটা তার সরকারের কাছে বলবেন। আমরা আসলে অফিশিয়ালি কোনো রেসপন্স (সাড়া) পাইনি। তারা বিষয়টি দেখবেন—এ রকম জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ জানতে চাইলে তৌফিক হাসান জানান, আসলে এই বিষয়টা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে যদি কনসার্ন মিনিস্ট্রি বা অফিস থেকে আমাদের জানানো হয়…আমাদের কিন্তু অফিশিয়ালি সেভাবে জানানো হয়নি। সে রকম যদি আমরা নির্দেশনা পাই আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেব।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ভারতে কতজন বাংলাদেশি পালিয়ে গেছেন আর তাদের সংখ্যা সরকার জানে কিনা—এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, সত্যিকার অর্থে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই।
জুলাই-আগস্টে আহত শিক্ষার্থীদের ভারতে চিকিৎসার বিষয়ে কোনো আলোচনা আছে কিনা—জানতে চাইলে তৌফিক হাসান বলেন, এটি আমাদের জানা নেই। চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে কেউ অনুরোধ করেছেন—এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ অনুরোধ করেছে কিনা জানা থাকলে হয়তো আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি।
এ ব্যাপারে সরকার কোনো অনুরোধ করেনি বলেও জানান মুখপাত্র।
ভারতীয় ভিসা নিয়ে সরকারের পুরোনো বক্তব্য
জরুরি মেডিকেল ভিসা ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত। এ নিয়ে ভারত সরকারকে বার বার অনুরোধ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এখন অবদি সেই অর্থে ভিসা প্রাপ্তির জটিলতা কাটছে না। ভারতীয় ভিসার অগ্রগতি নিয়ে পুরোনো তথ্যই সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে শেয়ার করেছেন মুখপাত্র তৌফিক হাসান।
এ প্রসঙ্গে মুখপাত্রের বক্তব্য, এটি ভারত কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি। তারা বারবারই তাদের জনবলসংকটের কথা বলে আসছে। যে কারণে আমরা এখন যেটা করছি, তৃতীয় দেশে যে ভিসার আবেদন ভারতীয় ডাবোল এন্ট্রি ভিসা প্রত্যাশী, সেটা আমরা তাদের (ভারতকে) বলেছি; তারা যেন এটা জরুরি ভিত্তিতে এটা দেখে।
তৌফিক হাসান বলেন, জরুরি বা ইমার্জেন্সি মেডিকেলের জন্য যে ভিসাগুলো যেন তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে সেটা আমরা বলেছি। এ ছাড়া, তৃতীয় দেশে ভারতীয় ভিসা প্রত্যাশিত ডাবল এন্ট্রি বিশেষ করে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এই ভিসার আবেদন সহজীকরণের জন্য ভারতীয় দূতাবাসকে অনুরোধ করা হয়েছে। এভাবে আমরা ভিসা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।