ডার্ক মোড
Saturday, 20 April 2024
ePaper   
Logo
বৈদেশিক সুসম্পর্ক রক্ষায় সক্রিয় আ. লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটি

বৈদেশিক সুসম্পর্ক রক্ষায় সক্রিয় আ. লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটিও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। উপকমিটির সাংগঠনিক তৎপরতা ও কর্মসূচিও বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায়।

শনিবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শোকের মাস উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে উপকমিটি। সভায় ঢাকার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত থাকবেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখবেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও উপকমিটির সদস্য সচিব ড. শাম্মী আহমেদ।

এর আগে আগস্টজুড়ে শোক পালনের অংশ হিসেবে গত ৬ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটি। এ ছাড়াও পুরো আগস্টজুড়েই নানা ভার্চ্যুয়াল কর্মসূচিতে অংশ নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন উপকমিটির সদস্যরা। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র।

গত মাসেই জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদলের দেখা করেন উপকমিটির সদস্যরা। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করে দুই পক্ষ।

এসময় জাতিসংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান গুইন লুইস। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের মতো দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উপকমিটির সদস্য সচিব ড. শাম্মী আহমেদ। রমজানমাসজুড়েও ইফতার পার্টির মাধ্যমে কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটিয়েছেন উপকমিটির নেতারা। এর আগে চলতি বছরে মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান ভিনজেয় মুরালিধর।

তার সঙ্গেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন উপকমিটির নেতারা। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই ভৌগোলিক অবস্থানের বিবেচনায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিকভাবে অংশীদারিত্বমূলক সুসর্ম্পক কিংবা কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর ভর করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অন্যতম আকর্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সমতল ভূমির নদীমাতৃক দেশটি।

চমকপ্রদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ দিনদিন আরও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তা সত্ত্বেও দেশের অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জ কিন্তু কমছে না বরং বাড়ছেই। নিরাপত্তা আর অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব মোড়লদের কেন্দ্রিক নানা আঞ্চলিক জোট ও বিশ্ব জুড়ে সংঘাতের মাদল যেন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জকে আরও বেগমান করছে। তা ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জও খুব সতর্কতার সঙ্গে সামলাতে হচ্ছে সরকারকে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এখন পর্যন্ত কার্যত সফল।

এ সফলতার অন্তরালে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গেই শক্রতা নয়’ নীতি অনুসৃত চৌকশ পররাষ্ট্রনীতি। এছাড়াও রয়েছে আরও বেশকিছু শ্রম ও মেধাসাধ্য প্রয়াস। মূলত এসব প্রয়াসের ওপর অনুসন্ধানী আলো ফেলতে সংবাদ সারাবেলার নজরে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সাংগঠনিক তৎপরতার নানা দিক।

২০২১ সালের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জমিরকে চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদকে সদস্য সচিব করে বর্তমান উপকমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর থেকে উপকমিটির তৎপরতা আগের চেয়েও বেগবান হতে শুরু করে এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বর্ষীয়ান কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির উপকমিটির নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করলেও সংগঠনের মেধা ও শ্রমসাধ্য কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করে যাচ্ছেন সদস্য সচিব ড. শাম্মী আহমেদ। তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন সংসদ সদস্য, দায়িত্ব পালন করেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও।

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত এক পরিবার থেকে উঠে আসলেও ড. শাম্মী আহমেদ দলের অতিগুরু ও সংবেদনশীল দায়িত্ব পেয়েছেন নিজ যোগ্যতা ও ক্যারিশমার জোরে। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন ড. শাম্মী আহমেদ। ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সঙ্গে।

উপকমিটির কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, তার ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ ও দলের প্রতি একনিষ্ঠ মনোভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। নীরবে কাজ করে যেতেই ভালবাসেন প্রচারবিমুখ শাম্মী। আর মূলত শাম্মীর এসব গুণাবলি-ই তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। আর সেই আস্থার যথাযথ প্রতিদানও দিচ্ছেন কাজের মাধ্যমে। বিদেশি দাতা দেশ ও গোষ্ঠীসমূহের কূটনীতিক থেকে শুরু করে ঢাকায় নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন তিনি। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে জটিল ও অপ্রিয় ইস্যু নিয়ে কথা বলেন সাবলীলভাবে। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে নানা ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে দেশের অবস্থান ও এর পেছনে যুক্তি ব্যাখায় ড. শাম্মী আহমেদের মুন্সিয়ানা প্রমাণিত বলেও সারাবেলাকে জানিয়েছেন উপকমিটির একজন সদস্য।

এদিকে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক কৌশল হিসাবে চীন ও ভারত রীতিমতো এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেষ্টা করছে, যা খুব সহজ নয়। তবে এই প্রচেষ্টায়ও চলতি বছর আওয়ামী লীগের উপকমিটির কিছু তৎপরতা ছিল। এপ্রিলের শেষ দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ.ই. লি জিমিংয়ের সঙ্গে নিজের বাসভবনে দেখা করেন ড. শাম্মী আহমেদ।

এর পরপরই ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীকেও স্ত্রীসহ আমন্ত্রণ জানিয়ে চমৎকার আড্ডা দেন তিনি। আমন্ত্রণের বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ের কিংবা নিতান্তই সৌজন্যমূলক হলেও এটি ইঙ্গিত দেয় যে, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে হয়ত কাজ করে যাচ্ছেন ড. শাম্মী আহমেদ। আরও জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নানা ইস্যু পর্যালোচনায় এখন নিয়মিত বৈঠক করে উপকমিটি সদস্যরা।

এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে নীতি নির্ধারণসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বার্তাও সময় মতো পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে এ উপকমিটি।

উপকমিটিরচেয়ারম্যানরাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির ও সদস্য সচিব: ড. শাম্মী আহমেদ। সদস্যরা হলেন: সৈয়দ শাহেদ রেজা, শাহাব আহমেদ, খান মনিরুল ইসলাম মোস্তাক, তারিক হাসান শমি, শাহ আলী ফরহাদ, জাফর সাদিক বিপ্লব, তরুণ কান্তি দাস, ড. শেখ আব্দুল্লাহ আল ইমরান, ব্যারিস্টার ইমরানুল কবির, ব্যারিস্টার ইমরানুল হাই, নাদিয়া চৌধুরী, শাহরিন তিলোত্তমা শ্রাবণ, ফাইয়াজুল হক রাজু, শিখা বোস, নারায়ন সাহা মনি, ড.মো. এনায়েতুল্লাহ তুষার, রায়হান সাকিব, গোলাম ফরিদ আহমেদ, শারমিন সুলতানা লিলি, ফাইরুজ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, সৈয়দ মনির, সুমগ্না করিম, সিলভিয়া পারভিন, সুরুজ আলম, সুমন কুন্ডু, কামাল মোহাম্মদ নাসের, আসাদুজ্জামান নাদিম, রুহুল আমিন, শেখ মোমিন, জসিমউদ্দীন আকন্দ রনি, কান্তারা খান, নেহরিন মোস্তফা, প্রতীক চক্রবর্তী, ফাহিমা চৌধুরী মনি, আসওয়াত আকসির মুজিব ওয়াসি, আয়ুব আলী, জিয়াউল হক শিমুল, ফাহাদ ইউসুফ হোসেন, খালেদ মাসুদ আহমেদ, আব্দুল মজিদ। কমিটিতে তিনজন বিশেষজ্ঞও রয়েছেন। তারা হলেন, ড. আব্দুল মইন, ড. শামস রহমান ও ড. মো. মহিউদ্দিন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন