ডার্ক মোড
Friday, 04 July 2025
ePaper   
Logo
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন : স্টল নিয়ে ব্যবসা করছেন অন্যরা, কর্পোরেশন আয় থেকে বঞ্চিত

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন : স্টল নিয়ে ব্যবসা করছেন অন্যরা, কর্পোরেশন আয় থেকে বঞ্চিত

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বরিশাল 

বরিশালে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির অন্যতম খাত বিভিন্ন মার্কেটের স্টল নিয়ে একটি চক্র লাভবান হলেও কর্তৃপক্ষের খাত রয়েছে শূন্য । 

অভিযোগ রয়েছে নগরীর ১২টি মার্কেটের ১৬৫০টি স্টলের প্রায় সবগুলোই চলে গেছে জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ও বিসিসির কর্তা-কর্মিদের হাতে। এদের হাত থেকে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ব্যবসা করতে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পজেশন বাবদ গুনতে হচ্ছে স্টল প্রতি অন্তত ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। মাসিক ভাড়া গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা যার ছিটেফোঁটাও কোন অংশ বিসিসি পাচ্ছে না। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেনা স্টল।

বরিশাল নগরীর বৃহৎ ফজলুল হক এভিনিউ মার্কেটে বিসিসির স্টল সংখ্যা ২৭৩টি। এসব স্টল বাবদ বিসিসির মাসিক আয় তিন লাখ টাকা। একইভাবে সদর রোড মার্কেট, মেডিকেল মার্কেট, মিউনিসিপাল মার্কেটসহ মোট ১২টি স্টল মার্কেটের মোট স্টল ১৬৫০ টি স্টল থেকে বছরে মাত্র তিন কোটি টাকা আয় হচ্ছে বিসিসির। কিন্তু নগরীর প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এর একটি স্টলও কোনদিন বরাদ্দ পায়নি। তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে অন্য ভবনের স্টল চড়া দামে পজেশন ও ভাড়া গুনে ব্যবসা করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যের উপর।

বই ব্যবসায়ি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার এই দোকানের বয়স ৮০ বছর। এই ৮০ বছরে বহুবার পৌরসভা থেকে বিসিসিতে একটি স্টল চেয়ে আবেদন করেছি কিন্তু পাইনি। পাইনি এজন্য যে এসব স্টল আত্মীয়-স্বজনকে অথবা লেনদেনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে যার একটির সামর্থ্যও আমাদের নেই। এখানে আমরা ২০ লাখ টাকা পজেশন ও ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছি। মূল ব্যবসায়ীরা কেউই স্টল পায়নি।

স্টল বরাদ্দ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের ৯১টাকা বর্গফুট হিসেবে ভাড়া দিলেও বিসিসি ভাড়া পাচ্ছে মাত্র ৬টাকা। আর তাই অন্য বানিজ্যিক মার্কেটগুলো লাভ করলেও বিসিসির খাতা থাকছে শূন্য। প্রকৃত স্টল মালিকরা এসব স্টল দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আয় করে নিয়ে যাচ্ছে বেআইনীভাবে। ব্যবসায়ীদের দাবি তারা স্টলের বরাদ্দ পাচ্ছেন না। তারা মূল মালিকদের চড়া পজেশন ও ভাড়া গুনে ব্যবসা করছেন।

ঝাউতলা এলাকার একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমি এখানে ৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। স্টল মালিককে অগ্রীম ৬ লাখ এবং মাসিক ১৬ হাজার ১শ’ টাকা ভাড়া দিচ্ছি। অথচ ট্রেড লাইসেন্স আমার। আমার এই ব্যয় পণ্যমূল্য থেকে তুলতে হচ্ছে। স্টল আমার থাকলে পণ্যের দামও কমতো। অন্যজন বলেন, এই স্টলের প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে আমি স্টল কিনে নিয়েছি এবং বিসিসিকে জানিয়েছি। বিসিসিকে প্রতিমাসে ১০৬৭ টাকা ভাড়া দেই। এই মার্কেটে আমরা দুজনে নিজ স্টলে ব্যবসা করছি।

অপর ব্যবসায়ী বলেন, বিসিসির স্টল পাচ্ছে স্বজনরা। স্টল মালিকরা একের পর এক হাত বদল করে চড়া ভাড়া নিচ্ছে। আমাদের দাবি হলো প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দখে যেন স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়।

বিসিসির স্টলের নাম বদল করে ব্যবসা করা বেআইনী। নিয়ম হলো নাম বদল করে ব্যবসা করতে হলে দু’বছরের ভাড়ার সম পরিমান টাকা নতুন করে জমা দিয়ে তা করতে হবে। এখন পর্যন্ত নামমাত্র কয়েকজন এমনটা করেছেন। যদি নাম বদলের নিয়মটাও মানা হতো তাহলেও বিসিসি এ বাবদ কয়েক কোটি টাকা আয় করতে পারতো।

বিসিসির স্টল পরিদর্শক এসএম আবুল কালাম বলেন, বিসিসিকে ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হবে। অথচ অনুমতি নিতে কেউই আসে না। এমন অচলাবস্থা পৌরসভা সৃষ্টির পর থেকেই চলছে। আগে নীতিমালা ছিলোনা, নীতিমালা হবার পরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারছিনা কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অভাবে। সাবেক এক মেয়র ভাড়া দ্বিগুন করলে ওরা আন্দোলন করে তা বন্ধ করে দেয়। এখন অবশ্য রাজনৈতিক প্রভাব নেই। এখন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে আমরা পারবো।

আয় বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় এই ক্ষেত্রটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন , আমরা ইজারা এবং মাসিক ভাড়ায় বাজার ও স্টল বরাদ্দ দিয়ে থাকি। এক্ষেতে নিজ স্টল অন্যের কাছে ভাড়া দেয়ার শর্ত ভঙ্গ কেউ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া প্রতি তিনবছর পর বাজার মূল্যায়ন করে ভাড়ার পরিমান হালনাগাদ করা হবে।

বর্তমানে বিসিসি এসব স্টল থেকে মাসে সর্বনিম্ন মাত্র ৫২৭ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৭২৫ টাকা ভাড়া পাচ্ছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন